কিভাবে বাড়িতে পাইলস এর চিকিৎসা করবেন

কিভাবে বাড়িতে পাইলস এর চিকিৎসা করবেন আজকের এই পোস্টে আমি আলোচনা করব। আজকের পোস্টটি পড়লে আপনারা জানতে পারবেন কিভাবে বাড়িতে পাইলস এর চিকিৎসা করবেন। যারা পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন তারা কিভাবে বাড়িতে পাইলস এর চিকিৎসা করবেন জানতে হলে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
কিভাবে বাড়িতে পাইলস এর চিকিৎসা করবেন
পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন এমন লোকের সংখ্যা বর্তমানে বেড়ে চলেছে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে বাড়িতে পাইলস এর চিকিৎসা করবেন। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়তে আমাদের সঙ্গে থাকুন।

পোস্ট সূচিপত্র: কিভাবে বাড়িতে পাইলস এর চিকিৎসা করবেন

ভূমিকা

পাইলস রোগের কারণে মানুষ অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। শুধুমাত্র মানুষের খাদ্যাভাস এবং জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনের কারণে এ রোগটি বেশি হয়ে থাকে। পাইলস রোগটি হলে কিভাবে বাড়িতে পাইলস এর চিকিৎসা করবেন এ সম্পর্কে আজকে আলোচনা করা হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আগে বাড়িতে কিছু ঘরোয়া পরিচর্যার মাধ্যমে পাইলস রোগটি সারানো সম্ভব।

পাইলস রোগটি যেহেতু সভ্যতার একটি রোগ তাই এই রোগটি উন্নত দেশগুলো মানুষের মাঝে বেশি হয়ে থাকে। কারণ উন্নত দেশগুলোর মানুষদের জীবনযাত্রা দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে। এই রোগটি থেকে মুক্তি লাভ করার জন্য আপনাকে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। চলুন তাহলে আলোচনা করি কিভাবে বাড়িতে পাইলস এর চিকিৎসা করবেন।

পাইলস কি

পায়ুপথের মুখ যদি ফুলে যায় এবং রক্তপাত হয় অথবা পায়ুপথের রাস্তায় যদি শক্ত গোটার মত হয় তাকে আমরা পাইলস বলি। পাইলস এর আকার যদি জটিল না হয় তাহলে অপারেশন ছাড়াই ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা করে ভালো করা সম্ভব। এটি একটি সাধারণ সমস্যা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে পাইলসকে হেমোরয়েড বলা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে এই রোগের মূলে রয়েছে জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং অপরিকল্পিত খাদ্যভাস। তাই আপনার পাইলস হলে কিভাবে বাড়িতে পাইলস এর চিকিৎসা করবেন সে বিষয়ে ধারণা দেওয়া হবে।

পাইলসের লক্ষণ

আপনার পাইলস হয়েছে কিনা সেটা বোঝার কিছু লক্ষণ রয়েছে। নিচের লক্ষণ গুলি দেখা দিলে বুঝবেন যে আপনার পাইলস হয়েছে। নিচে পাইলসের লক্ষণ গুলি আলোচনা করা হলো।
  • পায়খানা করার সময় রক্তপাত হওয়া।
  • পায়ুপথে ব্যথা অনুভব হওয়া।
  • পায়ুপথের আশেপাশে ফুলে শক্ত হয়ে যাওয়া।
  • মলত্যাগের সময় মালের সাথে রক্তপাত হওয়া।
  • পায়ুপথের আশেপাশের চুলকানি হওয়া।
  • পায়ুপথে ব্যথার কারণে অস্বস্তি বোধ হওয়া।
  • পায়ুপথ নিচের দিকে নেমে আসা।
  • পায়খানার রাস্তায় রক্তক্ষরণ হওয়া।
উপরোক্ত লক্ষণ গুলি দেখা দিলে আপনি বুঝবেন আপনার পাইলস হয়েছে। এবং সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে পাইলসের চিকিৎসা করবেন। কিভাবে বাড়িতে পাইলস এর চিকিৎসা করবেন নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই পাইলস হলে সময় নষ্ট না করে ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো মেনে চলুন।

কিভাবে বাড়িতে পাইলস এর চিকিৎসা করবেন

যারা পাইলস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তারা কিভাবে বাড়িতে পাইলস এর চিকিৎসা করবেন আজকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে। ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি গুলো জানা থাকলে আপনি সহজেই বাড়িতে পাইলসের চিকিৎসা করতে পারবেন। চলুন তাহলে জেনে নেই কিভাবে বাড়িতে পাইলস এর চিকিৎসা করবেন।
  • গরম পানি: গরম পানির ভাপ পাইলসের জন্য অনেক উপকারী। যারা পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন তারা হালকা কুসুম গরম পানিতে বসে আক্রান্ত জায়গায় গরম পানির ভাপ নেন। এতে করে দ্রুত আপনার পাইলসের ব্যথা নিরাময় হবে। পাইলসের সমস্যা ও আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাবে।
  • ইসবগুল: ইসবগুল পাইলসের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকরী। নিয়মিত ইসবগুলের ভুষি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যায়। এবং ধীরে ধীরে পাইলসের সমস্যা ও দূর হয়ে যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য নিয়মিত খান ইসবগুলের ভুষি।
  • অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরাতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি গুণাগুণ যা পাইলসের চিকিৎসায় অত্যন্ত উপকারী। অ্যালোভেরাতে রয়েছে অনেক রোগের সমস্যার সমাধান। তাই পাইলসের চিকিৎসায় নিয়মিত অ্যালোভেরা খেতে পারেন। অ্যালোভেরা জেল আক্রান্ত স্থানে লাগালে দ্রুত ব্যথার উপশম হয়।
  • আইস প্যাক: পাইলসের ব্যথা কমানোর জন্য আপনি আইসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। পাইলস আক্রান্ত স্থানে সরাসরি বরফ ব্যবহার না করে একটি ব্যাগের মধ্যে বা কাপড়ের মধ্যে জড়িয়ে ব্যবহার করুন। এতে দ্রুত পাইলসের ব্যথা কমে যাবে।
  • জাম: জাম খেলে পাইলসের সমস্যা দ্রুত দূর হবে। জামে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা পাইলসের জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত জাম খেলে পায়খানাও নরম থাকে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না। তাই দিনে অন্তত দুই তিনটা জাম খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • তিল: বর্তমানে অনেকেই তিল খেয়ে থাকেন। তিল খেলে অনেক ধরনের সমস্যার সমাধান হয়। পাইলসের সমস্যা সমাধানে তিল ব্যবহার করুন। তিল বেটে আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করুন। এই ঘরোয়া টোটকা পাইলস চিকিৎসায় অনেক উপকারী।
  • নিম: নিমে রয়েছে অনেক ঔষধি গুনাগুন। নিম খেলে অনেক রোগের উপকার হয়। নিমপাতা পাইলস রোগের জন্য অনেক উপকারী। নিমপাতা বেটে পাইলস আক্রান্ত স্থানে লাগালে চুলকানির উপশম হয়। তাই পাইলসের চিকিৎসায় নিয়মিত নিম পাতা ব্যবহার করুন।
  • লেবুর রস: যদি প্রশ্ন করেন কিভাবে বাড়িতে পাইলস এর চিকিৎসা করবেন তার সমাধান হলো লেবুর রস। লেবুর রস এ রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা পাইলস রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী। লেবুর রস খেলে মলদ্বারের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই খাবারের টেবিলে অবশ্যই লেবু রাখতে পারেন।
  • আপেল সিডার ভিনেগার: আপেল সিডার ভিনেগার এ রয়েছে পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়। আপেল সিডার ভিনেগার খেলে পাইলসের সমস্যা দূর হতে পারে। আপেল সিডার ভিনেগার পাইলস আক্রান্ত স্থানে লাগালে ব্যথা এবং চুলকানির উপশম হয়।
  • ক্যাস্টর অয়েল: ক্যাস্টর অয়েল হলো এক ধরনের প্রাকৃতিক তেল যা পাইলস রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। ক্যাস্টর অয়েলে রয়েছে অ্যান্টি ফাঙ্গাল, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং আন্টি ইনফ্লামেটরি গুণাগুণ। তাই নিয়মিত ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি দ্রুত পাইলস রোগ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারেন।
  • উইচ হ্যাজেল: ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে উইচ হ্যাজেল ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকের যত্নে উইচ হ্যাজেল উদ্ভিদ ব্যবহার করা হয়। তাই আপনি চাইলে পাইলস চিকিৎসায় উইচ হ্যাজেল ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার পাইলসের সমস্যা দূর হবে।
  • ইপসম সল্ট: ইপসম সল্ট পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করুন খুব কার্যকরী। ইপসম সল্ট পানিতে মিশিয়ে গোসল করুন। ইপসম সল্ট এর সাথে পানি মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করুন দ্রুত ব্যথা সেরে যাবে।
  • চা গাছের তেল: চা গাছের তেল পাইলস এর চিকিৎসায় অত্যন্ত উপকারী। চা গাছের তেল আক্রান্ত স্থানে লাগালে দ্রুত পাইলস সমস্যা দূর হয়। তাই ঘরোয়া চিকিৎসা হিসাবে চা গাছের তেল অনেক কার্যকরী।
  • ফাইবারযুক্ত খাবার: ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে পাইলসের সমস্যা অনেক দ্রুত সেরে যায়। তাই আপনার নিয়মিত খাবার তালিকায় রাখুন ফাইবার যুক্ত খাবার। ফাইবার যুক্ত খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে শাকসবজি, রুটি, ফলমূল ইত্যাদি।
  • প্রচুর পানি পান করা: পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা গুলোর মধ্যে অন্যতম হল প্রচুর পানি পান করা। পানি বেশি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আর কষ্ট কাঠিন্য থেকে মুক্তি পেলেই পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা: নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে পাইলস সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়। নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করলে শরীর সুস্থ থাকে। সাথে সাথে পাইলসের সমস্যা ও দূর হয়ে যায়।
  • শরীরের ওজন কমানো: শরীরের ওজন কমলে পাইলস রোগের উপশম হয়। তাই পাইলসের চিকিৎসায় ওজন কমানো অত্যন্ত জরুরী। শরীরের ওজন কমালে পাইলস সমস্যা থাকবে না।
  • টয়লেটে বেশিক্ষণ বসে না থাকা: অতিরিক্ত পায়খানার বেগ না আসলে টয়লেটে বেশিক্ষণ বসে না থাকাই ভালো। টয়লেটে বেশিক্ষণ বসে থাকলে পাইলসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্রয়োজন ছাড়া টয়লেটে যাওয়া ঠিক নয়।

পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধের নাম

এতক্ষণ আপনারা জানলেন কিভাবে বাড়িতে পাইলস এর চিকিৎসা করবেন এই সম্পর্কে বিস্তারিত। এখন পাইলসের চিকিৎসায় কি কি ঔষধ ব্যবহার হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। সাধারণত উপরের ঘরোয়া চিকিৎসা গুলোর মাধ্যমে দ্রুত পাইলস রোগ সারানো সম্ভব। এছাড়াও পাইলসের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় পাইলো স্প্রে।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পাইলো স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। তবে সব সময় চেষ্টা করবেন ঘরোয়া পদ্ধতিতে পাইলস রোগ সারাতে। পাইলস জটিল থাকার ধারণ করা না পর্যন্ত ঘরোয়া চিকিৎসা চালিয়ে যান। পাইলস এর আক্রমণ বেশি বেড়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

শেষ কথা: কিভাবে বাড়িতে পাইলস এর চিকিৎসা করবেন

প্রিয় পাঠক, আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করলাম কিভাবে বাড়িতে পাইলস এর চিকিৎসা করবেন সেই সম্পর্কে। আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনি বুঝতে পেরেছেন কিভাবে বাড়িতে পাইলস এর চিকিৎসা করবেন। পাইলসের এই ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো খুব সহজেই আপনি বাড়িতে করতে পারেন।
পাইলসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বাড়িতে অবশ্যই এই চিকিৎসা পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করবেন। আমার পোস্টটি পড়ে যদি আপনার উপকার হয় তাহলে অবশ্যই পোস্টটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এই পোস্টটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টে জানাবেন। ধন্যবাদ। ২৫৭৯২

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url