হাঁপানি রোগীর হঠাৎ টান উঠলে কি করবেন

হাঁপানি রোগীর হঠাৎ টান উঠলে কি করবেন এ বিষয়ে জেনে থাকা উচিত। আজকের আর্টিকেলে আপনাদেরকে জানাব হাঁপানি রোগীর হঠাৎ টান উঠলে কি করবেন সে সম্পর্কে। আজকের পুরো আর্টিকেল জুড়ে থাকছে হাঁপানি রোগীর হঠাৎ টান উঠলে কি করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত। চলুন তাহলে দেখে আসি হাঁপানি রোগীর হঠাৎ টান উঠলে কি করবেন তার বিস্তারিত বিবরণ।

পোস্ট সূচিপত্রঃ হাঁপানি রোগীর হঠাৎ টান উঠলে কি করবেন

ভূমিকা

হাঁপানি রোগীর হঠাৎ টান উঠলে কি করবেন, হাঁপানি রোগীদের যেকোনো সময়, যে কোন অবস্থাতেই টান উঠতে পারে। বিশেষ করে শীতকাল তাদের জন্য খুবই বিপদজনক একটি সময়। হাঁপানি রোগীদের হাঁপানির টান সবথেকে বেশি শীতকালে উঠে থাকে। এছাড়াও ধুলাবালির সংস্পর্শে এলে হাঁপানির টান উঠে যায়। আবার কখনো ফুলের পরাগরেণুর সংস্পর্শে আসলেও রোগীর টান উঠে। যেকোনো ভাইরাস সংক্রমণ, জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি সমস্যার কারণে ও হঠাৎ হাঁপানির টান উঠে।

কোন ব্যক্তির হাঁপানির সমস্যা থাকলে হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, আর একে বলে অ্যাকিউট এক্সাজারবেশন। হাঁপানি রোগীর হঠাৎ হাঁপানির টান উঠলে বুকের ভেতর শোঁ শোঁ শব্দ হতে থাকে। এ সময় রোগীরা খুব কষ্ট পেয়ে থাকে। আর তাই হঠাৎ হাঁপানি রোগীর টান উঠলে কি করণীয় সে সম্পর্কে জেনে থাকা উচিত। আজ আমার আলোচনা করব হাঁপানি রোগীর হঠাৎ টান উঠলে কি করবেন সে সম্পর্কে। চলুন নিচে দেখে নেই হাঁপানি রোগীর হঠাৎ টান উঠলে কি করবেন তার কয়েকটি ঘরোয়া উপায় ।

হাঁপানি রোগীর হঠাৎ টান উঠলে কি করবেন

হঠাৎ করেই হাঁপানি রোগীর টান উঠলে বাড়িতেই প্রথমে চিকিৎসা শুরু করা উচিত এবং হাঁপানি রোগীর হঠাৎ টান উঠলে কি করবেন তার কয়েকটি উপায় নিচে আলোচনা করা হলোঃ
  • রোগীর হঠাৎ করেই হাঁপানির টান উঠলে রোগীকে সোজা করে বসিয়ে দিন এবং রোগীকে আশ্বস্ত করুন সে যেন আতঙ্কিত না হয়ে পড়ে।
  • সালবিউটামল ও ইপরাট্রোপিয়াম যুক্ত  ইনহেলার স্পেসারের সাহায্যে গুনে গুনে ৫ বার চাপ দিন।
  • এক্ষেত্রে এটি ব্যবহারে নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে থাকা জরুরী। এর জন্য স্পেসারের মধ্যে প্রত্যেকবার একটি করে চাপ দিয়ে তা থেকে পাঁচবার নিঃশ্বাস নিতে হবে। ঠিক এভাবে ৫ বার চাপ দিতে হবে, তবে খেয়াল রাখবেন ঠিকভাবে বড় করে শ্বাস নেওয়ার জন্য। ভালোভাবে শ্বাস নিয়ে ওষুধটি টেনে নিতে হবে, খেয়ে ফেললে হবে না।
  • এরপর ৫ মিনিটের মতো অপেক্ষা করুন, এতে করে হাঁপানির টান কমে যাওয়ার কথা কিন্তু যদি তারপরেও হাঁপানির টান না কমে, সেক্ষেত্রে আবারো পাঁচ বার চাপ দিন।
  • ইনহেলার ব্যবহারের পর যদি রোগীর শ্বাসকষ্ট না কমে, সেক্ষেত্রে অল্প সময়ের মধ্যে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ৫ চাপ করে ইনহেলার ব্যবহার করতে থাকবে।
  • কিন্তু যদি দেখেন হঠাৎ হাঁপানি উঠে যাওয়ার কারণে ঠিকভাবে কথা বলতে পারছে না। নখ নিল বর্ণ ধারণ করছে এ সমস্ত লক্ষণ দেখলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিবেন। কারণ এই সময় রোগীর অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে।
যে সমস্ত রোগীর হাঁপানির টান রয়েছে তাদেরকে সব সময় নিজেদের কাছে ইনহেলার রাখার চেষ্টা করতে হবে আর যদি সম্ভব হয় তাহলে নেবুলাইজার যন্ত্রটিও রাখতে পারেন এতে করে হঠাৎ হাঁপানির সমস্যায় পড়লে ঘরে বসেই তার সমাধান করতে পারেন। ইনহেলার ও নেবুলাইজার ব্যবহার করার পরেও যদি শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি না কমে, সেক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন।হাঁপানি রোগীর হঠাৎ টান উঠলে কি করবেন সে সম্পর্কে জানলেন।

শীতে হাঁপানি এড়াতে কি করবেন

হাঁপানির সমস্যা যে কোন সময় উঠলেও শীতকালে এটি খুব বেশি হয়ে থাকে। এজন্য চেষ্টা করতে হবে হাঁপানি রোগীকে শীতকালে খুব সতর্ক হয়ে চলতে। এর পাশাপাশি ঘরবাড়ি সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। হাঁপানি রোগীদের সাধারণত পশু পাখির লোমে এলার্জি থাকে, আর তাই এসব প্রাণী বাড়ির বাইরে রাখার চেষ্টা করুন। রোগী যে সমস্ত আসবাবপত্র বা পোশাক আশাক ব্যবহার করে সেগুলো চেষ্টা করবেন সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে। রোগীর সামনে কোনরকম ধুলাবালি পরে এমন কোন কিছু করা যাবে না, হাঁপানি রোগীদের ক্ষেত্রে গাড়ির ধোয়া অনেকটাই ক্ষতিকর তাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়ে থাকে। তাই চেষ্টা করতে হবে বাইরে বের হওয়ার সময় ফিল্টার মাক্স ব্যবহার করতে।

শীতকালে প্রচুর পরিমাণে কুয়াশা দেখা দেয়, এই কুয়াশা হাঁপানি রোগীদের জন্য খুবই মারাত্মক। তাই চেষ্টা করতে হবে কুয়াশা থেকে নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখা। কুয়াশা থাকাকালীন বাইরে বের না হওয়া, আর যদি খুবই দরকার হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ভালভাবে শরীর আবৃত করে বের হওয়া, সেই সাথে মাক্স ব্যবহার করা। এর পাশাপাশি ধূমপানের কারণেও হাঁপানির সমস্যা বেড়ে যায়, আর তাই ধূমপান থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখবেন। হাঁপানি রোগীদের ধূমপান করা যেমন ক্ষতিকর সেই সাথে অন্য কেউ ধূমপান করলে তার পাশে থাকা ও ক্ষতিকর।  এতে করে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে যায়।
আর তাই শীতকালে হাঁপানি এড়াতে রোগীকে সবসময় ঠান্ডা খাবার, ঠান্ডা পানি ইত্যাদি বিষয় থেকে দূরে রাখতে হবে। ঠান্ডা খাবার খাওয়া যাবেনা, অতিরিক্ত ঠান্ডার মধ্যে বাইরে বের হওয়া যাবে না, ঠান্ডা পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। সব সময় চেষ্টা করতে হবে উষ্ণ গরম খাবার খেতে। শীতকালে হাঁপানি রোগীদের বেশি কষ্ট হয়ে থাকে, তাই এই শীতকালে নিজের অতিরিক্ত যত্ন করা অনেক জরুরী। তা না হলে যে, কোন সময় যে কোন অবস্থাতেই হাঁপানির সমস্যা উঠতে পারে। আর তাই শীতে হাঁপানি এড়াতে খুব সতর্ক হয়ে চলতে হবে। এরপরও যদি হাঁপানি সমস্যা উঠে সেক্ষেত্রে কাছে অবশ্যই ইনহেলার রাখতে হবে। সমস্যা গুরুত্বর মনে হলে দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে। আপনারা জানলেন শীতে হাঁপানি এড়াতে কি করবেন সে বিষয়ে।

হাঁপানি রোগীদের কি করা উচিত নয়

হাঁপানির সমস্যা একটি জটিল সমস্যা এ সময় রোগীদের বিভিন্ন রকম নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়, তা না হলে হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয়ে যায়। হাঁপানি রোগীরা চাইলেই যে কোন কাজ করতে পারেনা, আর যদি করে ফেলে সেক্ষেত্রে তার শারীরিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আজ আমরা জানব হাঁপানি রোগীদের কি করা উচিত নয় সে সম্পর্কে। চলুন দেখে নেই হাঁপানি রোগীদের কি করা উচিত নয়।
  • হাঁপানি রোগীরা কখনোই ধুলাবালি সংস্পর্শে যেতে পারবেনা, এতে করে তৎক্ষণিক হাঁপানি সমস্যা শুরু হয়ে যায়। ধুলাবালির কোনো রকম কাজ করতে হলে অবশ্যই ভালোভাবে নাকে মুখে কাপড় দিয়ে কাজ করতে হবে, তবে ধুলাবালির কোনো রকম না করাই ভালো। কারণ ধুলাবালি সংস্পর্শে এলেই হাঁপানি টান উঠে যায়।
  • যে সমস্ত জিনিস থেকে হাঁপানির সমস্যা শুরু হতে পারে সে সমস্ত জিনিসগুলো বাড়ি থেকে দূরে রাখুন। হাঁপানি রোগীদের কোনরকম কোন খাবার অথবা পশু প্রাণীতে এলার্জি আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করে জেনে নিন। যদি কোন কিছুতে অ্যালার্জি থেকে থাকে তাহল, তা থেকে রোগীকে দূরে থাকতে হবে।
  • রোগীর বিছানা এবং ব্যবহৃত জিনিসপত্র প্রতিদিন ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে অথবা রোদে শুকাতে দিতে হবে। এর ফলে ধুলো ময়লা জীবাণুগুলো দূর হয়ে যাবে, ধুলো ময়লা বা শীতকালের ঠান্ডা কুয়াশা শরীরে লাগালে চলবে না। চেষ্টা করতে হবে সবসময় নিজেদেরকে পরিষ্কার রাখা এবং ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে সুরক্ষিত রাখা। ঘর থেকে বের হতে হলে ধুলাবালি জীবাণু থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য ফিল্টার মাক্স ব্যবহার করতে পারেন।
  • যাদের হাঁপানি রোগ রয়েছে তাদের ধূমপান করা একেবারেই নিষেধ, কারণ ধূমপান করার কারণে হাঁপানির কষ্ট মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। হাঁপানির পাশাপাশি ফুসফুস ও শ্বাসনালী সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। আর তাই হাঁপানি রোগীর কোনক্রমেই ধূমপান করা যাবে না।
  • হাঁপানি রোগীকে অবশ্যই নিয়ম করে ব্যায়াম করতে হবে, এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই যে ব্যায়াম করলে হাঁপানি সমস্যা বাড়ে। তবে সেটি একটি নিয়মের মধ্যে করতে হবে অতিরিক্ত ব্যায়াম করার ফলে হাঁপানি টান উঠতে পারে। 
  • ব্যায়ামের মধ্যে আপনি প্রতিদিন এক থেকে দুই কিলোমিটার রাস্তা ধীরে ধীরে হাঁটতে পারেন। সেই সাথে সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি এগুলো হাঁপানি রোগীদের জন্য ভালো ব্যায়াম। তবে হাঁটার ক্ষেত্রে অবশ্যই সোজা হয়ে হাঁটবেন সামনের দিকে ঝুকে হাঁটার চেষ্টা করবেন না।
  • হাঁপানি রোগীদের অবশ্যই টেনশন মুক্ত থাকতে হবে, কারণ অতিরিক্ত টেনশন বা মানসিক উদ্বেগ হাঁপানি টান বৃদ্ধি করতে পারে। তাই চেষ্টা করতে হবে সব সময় মনকে শান্ত রাখতে।
  • হাঁপানি রোগীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই যে কোনো ওষুধ সেবনের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করবেন। ইনহেলার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সঠিক নিয়মে ইনহেলার ব্যবহার করবেন।
সর্বশেষে, খেয়াল রাখবেন হাঁপানি রোগীদের এলার্জির কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো এড়িয়ে চলতে। কারণ আপনার অজান্তেই হঠাৎ করেই এলার্জিজনিত কারণে হাঁপানির সমস্যা শুরু হয়ে যেতে পারে। আর তাই কোন কোন বস্তুতে আপনার এলার্জির সমস্যা আছে সেগুলো অবশ্যই ভালোভাবে জেনে নিন। দীর্ঘদিন সুস্থ থাকতে অবশ্যই নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে।

হাঁপানি রোগীর হঠাৎ টান উঠলে কি করবেনঃ পরিশেষে

বিভিন্ন রকম কারণে হাঁপানি রোগীর হঠাৎ করেই টান উঠতে পারে। আর তাই সবসময় রোগীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, ঠান্ডা লেগে যায় এমন কোন কাজ করা যাবে না। রোগীর পোশাক-আশাক ধুলাবালি মুক্ত রাখতে হবে। ধুয়ে দিতে হবে, না হলে রোদে ভালোভাবে শুকাতে হবে। এর পাশাপাশি ধূমপান করা যাবে না।
আপনাদের মাঝে আলোচনা করেছি হাঁপানি রোগীর হঠাৎ টান উঠলে কি করবেন, শীতে হাঁপানি এড়াতে কি করবেন ও হাঁপানি রোগীদের কি করা উচিত নয় এ সমস্ত বিষয়গুলো। আপনারা আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হলে মন্তব্য করতে পারেন, ধন্যবাদ। ২৫২৪২

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url