অ্যাজমা অ্যাটাক হলে ও ইনহেলার না থাকলে করণীয় কি

আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করব অ্যাজমা অ্যাটাক হলে ও ইনহেলার না থাকলে করণীয় কি সে সম্পর্কে। অ্যাজমা অ্যাটাক হলে ও ইনহেলার না থাকলে করণীয় কি জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন। আসুন তাহলে দেখে নেই, অ্যাজমা অ্যাটাক হলে ও ইনহেলার না থাকলে করণীয় কি তা বিস্তারিতভাবে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ অ্যাজমা অ্যাটাক হলে ও ইনহেলার না থাকলে করণীয় কি

ভূমিকা

আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে যে কোন সময়, যে কোন অবস্থাতেই, অ্যাজমা সমস্যা বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে অ্যাজমা রোগটি অধিকাংশ বংশগতভাবে হয়ে থাকে, তবে আজকাল অতিরিক্ত বায়ু দূষণের ফলে অ্যাজমা সমস্যা বাড়ছে। যে সমস্ত ব্যক্তির অ্যাজমা সমস্যা থাকে তাদেরকে সাধারণত ইনহেলার ব্যবহার করতে দেখা যায়, ডাক্তাররা ইনহেলার পরামর্শ দিয়ে থাকে তবে।

তবে অনেক সময় ভুলবশত নিজের কাছে ইনহেলার থাকে না, সে সময় অ্যাজমার সমস্যা শুরু হলে অনেকের প্রাণসংশয় থেকে যায়। আর তাই অ্যাজমা অ্যাটাক হলে ও ইনহেলার না থাকলে করণীয় কি সে সম্পর্কে জেনে থাকা অনেক জরুরী। আজ আমরা জানতে চলেছি অ্যাজমা অ্যাটাক হলে ও ইনহেলার না থাকলে করণীয় কি সে সম্পর্কে। অ্যাজমা অ্যাটাক হলে ও ইনহেলার না থাকলে করণীয় কি তা বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো।

হাঁপানি কি?

আপনারা অনেকেই প্রশ্ন করেন যে আসলে হাঁপানি কি? হাঁপানি এমন একটি রোগ যার মাধ্যমে শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে, এক কথায় হাঁপানি হলো শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ। হাঁপানি রোগ হলে সাধারনত শ্বাসনালী ফুলে যায় এবং এর পাশাপাশি শ্বাসনালী সরু হয়ে যায়। এর কারণে রোগীদের শ্বাস গ্রহণে অনেক অসুবিধা অনুভব হয়। হাঁপানি সমস্যা হলে শ্বাসনালীতে বায়ু চলাচল করতে বাধা সৃষ্টি হয়, এরফলে হাঁপানি আক্রান্ত রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অনেক বেশি কষ্ট হয়। এ সমস্ত কারণেই অনেক সময় মানুষের শ্বাসকষ্টের সমস্যাও দেখা দেয়।
হাঁপানি রোগের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশ্বের প্রায় ১৫ কোটির ও বেশি মানুষ হাঁপানি রোগে আক্রান্ত। আর বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছর হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ৫০,০০০ লোক। হাঁপানির সমস্যা সব থেকে বেশি বংশগত কারণে হয়ে থাকে, বাবা অথবা মা দুজনের মধ্যে একজনের হাঁপানি সমস্যা থাকলে তাদের সন্তানদের হাঁপানি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার যদি এমন হয় বাবা-মা উভয়েরই হাঁপানি সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে বাচ্চাদের অ্যাজমা হওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি। তবে গবেষণায় জানা যায় বংশগত কারণ ছাড়াও পরিবেশগত কারণেও হাঁপানি সমস্যা হয়ে থাকে।

তবে এটি প্রতিরোধ যোগ্য, ঠিকভাবে চিকিৎসা নিলে দীর্ঘদিন যাবৎ মানুষ সুস্থ থাকতে পারে। হাঁপানি রোগীদের সাধারণত ডাক্তার ইনহেলার দিয়ে থাকে। তবে অনেক সময় কোন কাজের চাপে, কিংবা ভুলবশত ইনহেলার কাছে না থাকলে। সেই সময় যদি হঠাৎ হাঁপানি বা অ্যাজমা অ্যাটাক আসে সে ক্ষেত্রে কি করবেন, সে বিষয়গুলো জেনে থাকা জরুরী। আর তাই আমরা জানব, অ্যাজমা অ্যাটাক হলে ও ইনহেলার না থাকলে করণীয় কি সে সম্পর্কে।

অ্যাজমা অ্যাটাক হলে ও ইনহেলার না থাকলে করণীয় কি

যাদের অ্যাজমা সমস্যা আছে তাদের যেকোনো সময় অ্যাজমা অ্যাটাক হতে পারে। তারা সাধারণত নিজেদের কাছে ইনহেলার রাখেন, কিন্তু যদি ইনহেলার কাছে না থাকে। আর সেই সময় অ্যাটাক হলে বেশ কিছু নিয়ম ব্যবহার করে সে কঠিন পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সেভ রাখা যায়। আর তাই এখন আমরা জানতে চলেছি অ্যাজমা অ্যাটাক হলে ও ইনহেলার না থাকলে করণীয় কি সে বিষয়ে।

প্রথম অবস্থায় করণীয়ঃ হঠাৎ করে অ্যাজমা অ্যাটাক হলে রোগীর শ্বাস নিতে সমস্যা শুরু হয় এবং এই সময় রোগী তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই এই সময় রোগী শুতে চাই কিন্তু, কোন ভাবেই রোগীকে শুতে দেওয়া চলবে না। এক্ষেত্রে রোগীকে সোজা করে বসিয়ে রাখতে হবে।

গভীরভাবে শ্বাস নিনঃ রোগীকে বসানোর পর বেশ লম্বা লম্বা করে কয়েকবার শ্বাস নিতে বলুন। এরপর মুখ বন্ধ করে শুধু মাত্র নাক দিয়ে, জোরে জোরে শ্বাস নেবে এবং তা মুখ দিয়ে আস্তে আস্তে ছাড়বে। এভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

আতঙ্কিত হবেন নাঃ হঠাৎ করে অ্যাজমা অ্যাটাক হলে সাধারণত মানুষ প্যানিক করে বসে বা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। কিন্তু এই সময় যতটুক সম্ভব নিজেকে শান্ত রাখতে হবে, অতিরিক্ত আতঙ্কিত হওয়ার ফলে বুকের মাংসপেশি আরো শক্ত হয়ে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। আর তাই এ সময় আতঙ্কিত হওয়া যাবে না, নিজেকে শান্ত রাখতে হবে।

খোলা জায়গায় বিশ্রামঃ হঠাৎ করে অ্যাজমা অ্যাটাক আসলে চেষ্টা করবেন খোলা বাতাসে রোগীকে বসাতে এবং লম্বা লম্বা শ্বাস নিতে। এতে করে রোগী সঠিকভাবে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারবে এবং অল্প সময়ের মধ্যে রোগী অনেকটাই আরাম অনুভব করবে। প্রয়োজনে হাত পাখা দিয়ে আস্তে আস্তে বাতাস করতে পারেন।

কফিঃ অ্যাজমা অ্যাটাক হলে হাতের কাছে ইনহেলার না থাকলে, রোগীকে কফি পান করান। এক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন গরম গরম এবং বেশ কড়া করে কফি তৈরি করতে। এই সময় রোগীর শ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়ে থাকে আর তাই গরম ও কড়া কফি রোগীর শ্বাসনালী খুলে দেয়। এর ফলে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা কমতে থাকে।
ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করার পর ও যদি দেখেন রোগী স্বাভাবিক হচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে দ্রুতভাবে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। কারণ অতিরিক্ত সমস্যা হলে রোগীর ঠোঁট শুকিয়ে আসে, হাতের ও পায়ের নখ নীল বর্ণ ধারণ করে, এমন অবস্থায় রোগীর জন্য অক্সিজেন অনেক জরুরী হয়ে পড়ে। আর তাই যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হয়। কারণ এ সময় রোগীর অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন পড়ে।

আজকে আপনারা জানলেন অ্যাজমা অ্যাটাক হলে ও ইনহেলার না থাকলে করণীয় কি সে সম্পর্কে। এই সমস্ত নিয়মগুলো জেনে থাকা উচিত। হঠাৎ করে অ্যাজমা অ্যাটাক হলে, হাতের কাছে ইনহেলার না থাকলে এই নিয়মগুলো ফলো করে কাজ করলে রোগীর সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়।

হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে ইনহেলারের ভূমিকা

হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যেকোনো সময় অ্যাজমা অ্যাটাক হতে পারে। এ রোগটি বিশেষত বংশগত কারণে হয়ে থাকে, আবার পরিবেশগত কারণে ও হয়ে থাকে। বংশগত কারো হাঁপানি বা অ্যাজমা থাকলে তাদের সন্তানদের এ রোগটি হয়ে থাকে। সেই সাথে বিভিন্ন রকমের ধুলাবালি, বায়ু দূষণ, বিভিন্ন পশু প্রাণী, ইত্যাদিতে এলার্জিজনিত সমস্যা থাকে। অনেকের এ সমস্ত কারণেও হাঁপানি বা অ্যাজমা হয়ে থাকে।

হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে ইনহেলারের ভূমিকা, হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন রকম উপায় অবলম্বন করা যায়। তবে, সবথেকে অল্প সময়ের মধ্যে ইনহেলার ব্যবহার করার মাধ্যমে, হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে ইনহেলারের ভূমিকা রয়েছে অনেক। হাঁপানি এমন একটি রোগ যার মাধ্যমে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়। এ সময় দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে ইনহেলার ব্যবহারের মাধ্যমে। হাঁপানি সমস্যার প্রধান কারণ হলো, শ্বাসনালীর সংকোচন। ইনহেলারের মাধ্যমে ওষুধ নেওয়ার ফলে সরাসরি শ্বাসনালীতে ওষুধ পৌঁছে যায়, এর ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের পথ প্রসারিত হয়। আর তাই সাথে সাথেই রোগী অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি পাই। 

তবে, ইনহেলার কিন্তু কোন ওষুধ নয় বরং ইনহেলার এর ভেতর ওষুধ দেওয়া থাকে গ্যাসীয়ভাবে। এরপর ইনহেলার মুখের কাছে রেখে, ইনহেলার চেপে মুখ দিয়ে টেনে নিতে হয় এই গ্যাস। এর ফলে ওষুধটি সরাসরি শ্বাসনালীতে পৌঁছে যায় এবং শ্বাসনালী প্রসারিত করে। এতে করে রোগীর শ্বাস নেওয়ার কষ্ট দূর হয় এবং রোগী অল্প সময়ের মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠে। আর তাই অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রে বা হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে ইনহেলারের ভূমিকা অপরিসীম।

অ্যাজমা অ্যাটাক হলে ও ইনহেলার না থাকলে করণীয় কিঃ উপসংহার

অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রে অ্যাজমা অ্যাটাক হওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। এর কারণ হল অ্যাজমা রোগীদের অনেক সতর্ক থাকতে হয়, যে কোন ধূলাবালি, ময়লা, গাড়ির ধোয়া, বিভিন্ন রকম পশু প্রাণী, খাবার ইত্যাদিতে এলার্জিজনিত সমস্যা থাকে। এর ফলে হঠাৎ করেই অ্যাজমা অ্যাটাক হয়ে থাকে, তবে সঠিকভাবে চলাফেরা করলে অ্যাজমা অ্যাটাক রোধ করা সম্ভব। 
আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করেছি, হাঁপানি কি? অ্যাজমা অ্যাটাক হলে ও ইনহেলার না থাকলে করণীয় কি এবং হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে ইনহেলারের ভূমিকা সম্পর্কে। এ সমস্ত বিষয়ে আপনাদের আরো কিছু জানার প্রয়োজন হলে অবশ্যই মন্তব্য করুন, ধন্যবাদ। ২৫২৪২

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url