আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি - আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলতে কি বুঝায়
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি এই বিষয়টি সম্পর্কে অনেকেরই পূর্ণাঙ্গ ধারণা নেই। আজকের এই পোস্টে তাই বর্তমান সময়ে তুমুল আলোচিত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলতে কি বুঝায় সেই বিষয়টি তুলে ধরব। তাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি এই বিষয়ে পুরোপুরি ধারণা পেতে চাইলে এই পোস্টটি একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পড়ুন।
মানুষের চিন্তাশক্তি বা বুদ্ধি তার সহজাত প্রবণতারই অংশ। কিন্তু মানুষের চিন্তাশক্তি বা বুদ্ধি একটি যন্ত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করানোর অত্যাধুনিক সিস্টেম হিসেবে বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। আজকের এই পুরো পোস্ট জুড়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলতে কি বুঝায় সে বিষয়টি সহজ ভাবে উপস্থাপন করব। তাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি এই বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নটির উত্তর খুঁজে পেতে আপনাকে পুরো পোস্টটি পড়ে ফেলতে হবে।
পোস্ট সূচিপত্র - আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলতে কি বুঝায় জানুন
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি?
মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা প্রদান করে কোন যন্ত্রকে বিচার-বিশ্লেষণ করার মত ক্ষমতা দেওয়ার ধারণাকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলা হয়। একটা সময় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিষয়টি ছিল একপ্রকার কাল্পনিক একটি ধারণা। কিন্তু রাতারাতি প্রযুক্তির উৎকর্ষতার ফলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ধারণাটি আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। মানুষ এখন তার প্রয়োজনে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি ব্যাপক হারে ব্যবহার করছে।
বর্তমান পৃথিবীতে যার কাছে যত ডাটা রয়েছে সে তত সমৃদ্ধশালী। বিশ্বব্যাপী এই বিশাল সংখ্যক ডেটাকে প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিজ্ঞানীরা একটি চমৎকার পদ্ধতি নির্বাচন করেছে, যা মানুষের মস্তিষ্কের ন্যায় কাজ করে। এই পদ্ধতিটি নিউরাল নেট নামে পরিচিত। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রচুর ব্যবহার রয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যথাযথভাবে প্রয়োগের জন্য ডেভলপাররা তাদের সুবিধা মতো C/C+, Java, Lisp, CLISP, Prolog, Python ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Al) এর দুটি প্রকারভেদ রয়েছে। একটি হলো: Narrow AI এবং আরেকটি General Al. ন্যারো AI শুধু নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করতে পারে, যেমন: কোন ছবি চিহ্নিত করা, প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ করা ইত্যাদি। সকল এআই প্রযুক্তি ন্যারো AI এর অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে মানুষের মতো বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ সম্পাদনের সক্ষম উন্নত প্রযুক্তি হলো জেনারেল AI. সুতরাং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলতে কি বুঝায় তা জেনে ফেললেন।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর জনক কে
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি সেটি তো জানলেন, তবে চলুন এই চমৎকার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর জনক কে সেটি এবার জেনে ফেলি। আমেরিকান একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী জন ম্যাকার্থি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং প্রোগ্রামিং ভাষা লিম্ফ আবিষ্কার করেন। তার এই মহান আবিষ্কারের ফলস্বরূপ আমরা এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী বৃহৎ পরিসরে ব্যবহার করতে পারছি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আমাদের প্রযুক্তির উৎকর্ষতারই অংশ মাত্র।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিভাবে কাজ করে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমন একটি প্রযুক্তি যা সময়ের সাথে সাথে দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজে আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে আজকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ধারণা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। আপনারা ইতোমধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলতে কি বুঝায় সে সম্পর্কে জেনেছেন। এবার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিভাবে কাজ করে জেনে নিন।
বিভিন্ন অ্যালগরিদম ও পরিসংখ্যান মডেলের উপর ভিত্তি করে এআই সিস্টেমগুলো মূলত কাজ করে থাকে। এ সকল অ্যালগরিদমগুলো একটি বৃহৎ ডাটা সেটের অংশ যা চাহিদার ভিত্তিতে অনুরূপ প্যাটার্ন তৈরি করতে সক্ষম। সিস্টেমে যত বেশি ডাটা অ্যাকসেস করানো যায় তত বেশি আউটপুট বের করা সহজ হয়। এআই প্রযুক্তির একটি মূল উপাদান হলো মেশিন লার্নিং, যেখানে মেশিনকে ডাটা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করা হয়। এআইয়ের কাজের মান বাড়ানোর জন্য অধিক ডাটা প্রয়োজন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মূল কাজ হলো, এটি যত বেশি সম্ভব তথ্য বা উপাত্ত সংগ্রহ করে তা বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনাকে কাঙ্খিত ফলাফল প্রদান করে। ফলে তথ্য সঠিক হওয়ার হার অনেক বেশি থাকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ভাষা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে মানুষের ভাষা তারা খুব সহজেই বুঝতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে এটি আমাদের চাহিদার প্রেক্ষিতে তথ্য আউটপুট দিয়ে থাকে। সুতরাং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিভাবে কাজ করে তা আপনারা বুঝে নিলেন।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার
পোস্টের পূর্ববর্তী অংশ হতে আপনারা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলতে কি বুঝায় সে সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি কি কি ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে সেটি এবার আপনাদের জেনে নেওয়া দরকার। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজকে সহজ করে দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের সময়কে বাঁচিয়ে দিচ্ছে।
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি অনলাইনে আপনার পছন্দের শপিং করা বিষয়গুলোকে নিয়ে একটি অ্যালগরিদম সৃষ্টি করে। বর্তমানে প্রায় সকল শপিং অ্যাপগুলোতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপনার পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে তারা বিভিন্ন প্রোডাক্ট আপনার টাইমলাইনে শো করে।
- আপনি যদি রোগগ্রস্ত হন তবে সেই রোগকে সঠিকভাবে নির্ণয় করার জন্য বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি আপনার রোগের লক্ষণ ও কারণ অনুসন্ধান পূর্বক এই প্রযুক্তি আপনাকে কোন ওষুধ সেবন করতে হবে সেই নির্দেশনাও প্রদান করছে। একই সাথে অপারেশন, এক্স-রে, সার্জারিসহ বিভিন্ন কাজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে করা হচ্ছে।
- ড্রাইভিং এর ক্ষেত্রেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি কাজে লাগছে। আপনি যদি স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির মাধ্যমে গাড়ি ব্যবহার করতে চান অথবা জিপিএস এর সহায়তা নেন তবে সেটিও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করেই কাজ করে।
- আমরা আমাদের স্মার্টফোনে যত ভিডিও গেমিং করে থাকি, তা সবই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করেই তৈরি করা হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে বলেই গেমগুলো খেলতে আমাদের কাছে অধিক আকর্ষণীয় লাগে।
- বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের কার্যক্রম দ্রুত গতিতে নির্ভুলভাবে সম্পাদন করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ব্যাংকে টাকা গণনা, হিসাব রক্ষণসহ অন্যান্য যাবতীয় হিসাব নিকাশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে করা হয়।
- বিমান পরিবহনের ক্ষেত্রে অধিক মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করার কারণেই উড়োজাহাজ পরিবহনের সামগ্রিক ব্যবস্থাটি সহজ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে।
- যেসব জায়গায় মানুষ খুব সহজে কাজ করতে পারে না, যেমন: খনিজ থেকে বিভিন্ন পদার্থ আহরণের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। গভীর সমুদ্রের তলদেশ থেকে পেট্রোল ও অন্যান্য জ্বালানির অনুসন্ধান করা বেশ দুঃসাধ্য কাজ। সেই কাজটি আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছে বর্তমানের আধুনিক প্রযুক্তি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
- বর্তমানে ক্রিকেট, ফুটবল, দাবা, হকিসহ বিভিন্ন খেলা লাইভ সম্প্রচার ও ছবি তোলার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রত্যেকটি খেলোয়াড়ের চুল যারা বিশ্লেষণ করে খেলোয়াড়দের দুর্বলতা ও শক্তিশালী জায়গাগুলো চিহ্নিত করা সহজ হয়েছে।
- বর্তমানে দেশী বিদেশী বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলের সংবাদ পাঠ করার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা একদম মানুষের মতোই সংবাদ পাঠ করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে।
- এছাড়াও চন্দ্র অভিযান, মহাকাশ গবেষণা, মহাকাশে রকেট প্রেরণ করা, চন্দ্র ও সূর্যের অবস্থান নির্ণয় করা প্রকৃতি কাজে উন্নত প্রযুক্তির আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ধারণাটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে আমাদের প্রায় সকল কর্মকান্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তাদের নিয়ন্ত্রণ করার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। আশা করি আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ভালো দিকগুলো গ্রহণ করব এবং খারাপ দিকগুলো বর্জন করব। পোস্টটি এতদূর পর্যন্ত পড়ে নিশ্চয়ই আপনারা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলতে কি বুঝায় সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গভাবে জেনে ফেলেছেন।
শেষ কথা
প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান বিকাশের ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ধারণা ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন ধরনের কাজ অতি অল্প সময়ে সম্পন্ন করতে পারছি। এই পোস্টটি সম্পূর্ণটি আপনারা পড়ে থাকলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি সে বিষয়ে বিশদভাবে জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কিত আরো পোস্ট আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন। সর্বোপরি পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। এতক্ষণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। @23891
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url