বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম

আপনি কি বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম খুঁজছেন? আমাদের দেশে নির্দিষ্টভাবে বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম রয়েছে। তাই বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম এই পোস্টে পূর্ণাঙ্গভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সুতরাং, বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিতে হলে সম্পূর্ণ পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিধবা ভাতা সংক্রান্ত আবেদন গ্রহণ করছে। যারা প্রকৃতপক্ষে বিধবা ভাতা আবেদন করতে চান তাদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। এই পোস্টটিতে আমরা বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম এবং বিধবা ভাতা আবেদন ফরম ২০২৩ অনলাইন সহ বিধবা ভাতা সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য পূর্ণাঙ্গভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এসব তথ্য জানতে চাইলে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। 

পোস্ট সূচিপত্র - বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম জেনে নিন

বিধবা ভাতা আসলে কারা পাবে?

বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম জেনে নেওয়ার পূর্বে অনেকের মনে প্রথম প্রশ্ন থাকে বিধবা ভাতা মূলত কারা পাবে? তাদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখা ভালো যে, যেসব মহিলার স্বামী মারা গেছে এবং যাদের ফ্যামিলি আর্থিকভাবে অসচ্ছল তারাই মূলত বিধবা ভাতার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিধবা ভাতা আবেদন ও গ্রহণ করার সুযোগটি পেয়ে থাকে। 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অনুদানের মধ্যে অন্যতম অনুদান হিসেবে ১৯৯৮-১৯৯৯ সাল থেকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে বয়স্ক বা পরিত্যক্ত বিধবা ভাতা চালু করেন। আগে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত হলেও বর্তমানে বিধবা ভাতা সংক্রান্ত আবেদন কার্যক্রম মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। 

তবে বিধবা ভাতা গ্রহণ করার জন্য একজন নারীকে অবশ্যই বিধবা বা স্বামীহারা হতে হবে। প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্টস এবং স্বামীর তথ্য প্রদান করে একজন বিধবা খুব সহজেই বিধবা ভাতা আবেদন করতে পারেন। সরকার মূলত গরিব-দুঃখী বিধবাদের জন্যই এই সুবিধাটি চালু করেছে। বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম পোস্টের পরবর্তী অংশে বিস্তারিত জানবেন। 

বিধবা ভাতা আবেদন করার যোগ্যতা সমূহ কি কি

সরকারি বিশেষ নীতিমালা অনুযায়ী বিধবা ভাতা আবেদন করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা থাকতে হবে। তাই বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম জেনে নেওয়ার পূর্বে বিধবা আবেদন করতে কি কি প্রয়োজন হয় চলুন সেটি জেনে নেওয়া যাক।
  1. বিধবা ভাতা পাওয়ার অবশ্যই প্রার্থীকে বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে। 
  2. নূন্যতম ১৮ বছর বয়স হতে হবে এবং বয়স্ক বিধবারা ভাতার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার বেশি পাবে। 
  3. যারা শারীরিকভাবে কাজ করতে অক্ষম তাদেরকে ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে অধিক অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। 
  4. নিঃসন্তান, নিঃস্ব, স্বামীহারা অথবা স্বামী ছেড়ে দিয়েছে এমন ব্যক্তিও অধিক অগ্রাধিকার পাবে।
  5. নিজ জমির পরিমাণ ০.৫ একরের কম বা ভূমিহীন, গৃহহীন দরিদ্র হতে হবে। 
  6. বিধবা ব্যক্তির বাৎসরিক আয় ১২ হাজার টাকার কম হতে হবে। 
  7. অবশ্যই ন্যাশনাল আইডি কার্ড কিংবা জন্ম নিবন্ধন কপি থাকতে হবে। উপরে উল্লেখিত যোগ্যতা সমূহ যদি কোনো বিধবা নারী পূরণ করে তবে সে বিধবা ভাতা কার্ড পাওয়ার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে। 

বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনারা নিশ্চয়ই বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম কি কি রয়েছে সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বিধবা ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। বিধবা ভাতার জন্য যোগ্য আবেদনকারীরা দুটি উপায়ে বিধবা ভাতা আবেদন করতে পারবেন। 
  1. সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সরাসরি আবেদন ফরম পূরণ করে তার জমা দেওয়ার মাধ্যমে। 
  2. অনলাইনে সরাসরি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আবেদন করে। 

বিধবা ভাতা আবেদন ফরম ২০২৩ অনলাইন

বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম এর এই পর্যায়ে আপনাদের বিধবা ভাতা আবেদন ফরম ২০২৩ অনলাইন তথা অনলাইনে কিভাবে আবেদন করবেন সেটি উল্লেখ করব। 
  • অনলাইনে বিধবা ভাতা আবেদন করার জন্য সর্বপ্রথম মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আপনাকে প্রবেশ করতে হবে। আপনার যদি এখান থেকে সরাসরি আবেদন করতে চান তবে এই আবেদন ফরমে ক্লিক করুন। 
  • এই লিংকে ক্লিক করে খুব সহজে আবেদন করতে পারবেন। এই লিংকে প্রবেশ করার পর একটি অনলাইন পিডিএফ ফরম চলে আসবে। অতঃপর এই ফরমের সাথে ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যথাযথভাবে সংযুক্ত করতে হবে। 
  • তারপর সর্বশেষ সাবমিট বাটনে ক্লিক করলে আপনার বিধবা ভাতা আবেদন সম্পন্ন হয়ে যাবে। তবে মনে রাখবেন একবার তথ্য দিয়ে আবেদন করলে সেই তথ্য আর সংশোধন করা যায় না। 
  • তাই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ফরমটি পূরণ করা প্রয়োজন। অতএব আপনারা সতর্কতার সহিত কয়েকবার চেক করে সকল তথ্য নির্ভুলভাবে প্রদান করে তবেই সাবমিট করবেন। ওয়েবসাইটে যদি ফরমটি শো না করে তবে কিছুক্ষণ পরপর পুনরায় চেষ্টা করবেন। 

সরাসরি বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম

আপনারা ইতোমধ্যে অনলাইনে বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিয়েছেন। আপনারা চাইলে আবেদন ফরম সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট অফিসে জমা দানের মাধ্যমেও বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করতে পারেন। এবার চলুন সরাসরি কিভাবে বিধবা ভাতা আবেদন করবেন সেটি জেনে নিই।
  • আপনি আপনার নিকটস্থ পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিধবা ভাতা আবেদন করার ফরমটি সংগ্রহ করবেন। আর অনলাইন থেকে সংগ্রহ করে ডাউনলোড করে নিতে চাইলে এখানে চাপ দিন। 
  • এবার নাম ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য যথাযথভাবে প্রদান করে ফরমটি পূরণ করে ফেলুন। আপনি চাইলে পূরণ করে প্রিন্টও করতে পারেন। অতঃপর ছবির জায়গা ছবি পিনআপ করে, সিগনেচার এর জায়গায় সঠিকভাবে সিগনেচারটি দিয়ে দিন। 
  • আপনার ফরমটি পূরণ করা হয়ে গেলে সেই ফরমের সাথে আপনার ন্যাশনাল আইডি কার্ডের একটি ফটোকপি জুড়ে দিয়ে, নিকটস্থ পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা মেম্বার এর কাছে জমা দিন। 
  • ফরমে সব সময় সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করবেন এবং আপনার ভ্যালিড ফোন নাম্বারটি প্রদান করুন। কেননা আপনি যদি বিধবা ভাতা আবেদনের জন্য নির্বাচিত হন তখন আপনাকে সেই ফোন নাম্বারে এসএমএস বা কল দিয়ে যোগাযোগ করা হবে। এভাবে আপনি সরাসরি ফরম জমা দানের মাধ্যমে বিধবা ভাতার জন্য সরকারের নিকট আবেদন করতে পারেন। আশা করি সরাসরি বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম আপনাদের সামনে ক্লেয়ার হয়েছে। 

বাংলাদেশে বিধবা ভাতা কত টাকা পাওয়া যায় 

পোস্টটি পূর্ববর্তী অংশ হতে আপনারা বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম পুরোপুরি ভাবে জেনে নিয়েছেন। চাইলে আপনারা উক্ত দুটি নিয়মে বিধবা ভাতা খুব সহজেই আবেদন করতে পারেন। ১৯৯৮-৯৯ সালে যখন প্রথম বিধবা ভাতা চালু করা হয় তখন মাসে মাত্র ১০০ টাকা করে প্রদান করা হতো। বর্তমানে ২০২৩ সালে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে বছরে ১৫০০০/- টাকা বিধবা ভাতা হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। আপনারা চাইলে খুব সহজে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সেই টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। 

উপসংহার 

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ে আপনারা বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াবলী সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। বিধবাদের এই ভাতা সুবিধা প্রদান করার জন্য সরকার প্রতিবছর প্রায় কয়েকশো কোটি টাকা বাজেট নির্ধারণ করে। কোনো মহিলা যদি বিধবা হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে তবে তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্যই বাংলাদেশ সরকার এই ভাতা সুবিধা চালু করেছে। যার সুফল জনগণ ভোগ করছে। 

আপনারা চাইলে এখন পোস্টে উল্লেখিত বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করে বিধবা ভাতা নেওয়ার জন্য মনোনীত হতে পারেন। তাছাড়াও আপনার আশে পাশে থাকা কোনো বিধবা মহিলাকে উক্ত নিয়মে বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করে দিয়ে সহায়তা করতে পারেন। পোস্টটি উপকারে আসলে শেয়ার করে টাইমলাইনে রেখে দিন এবং দৈনন্দিন জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় নিত্যনতুন বিভিন্ন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ। @23891

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url