তলপেট কমানোর উপায়

অনেকেই তলপেট কমানোর উপায় জানতে চেয়ে থাকেন। তলপেট কিভাবে কমাবেন সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়ার লক্ষ্যে আজকের এই আর্টিকেলে তলপেট কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করব। সুতরাং তলপেট কমানোর উপায় জেনে নেওয়া জন্য এই পোস্টটি অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে ফেলুন।
তলপেটের মেদ বৃদ্ধি পেয়ে অনেকেই বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পতিত হন। বয়স বাড়তে থাকলে তলপেটের মেদও বৃদ্ধি পায়। একবার তলপেটে মেদ হয়ে গেলে সেটি নিয়ন্ত্রণে থাকেনা। তাই তলপেটের মেদ থেকে রেহাই পাওয়া অনেকটাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তলপেট কিভাবে কমাবেন সেটি জানানোর উদ্দেশ্যে আজকের এই পোস্টে আমরা তলপেট কমানোর উপায় এবং তলপেট কমানোর ব্যায়াম সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত ধারণা দেব। তাই তলপেট কমানোর উপায় জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে নিন।

পোস্ট সূচিপত্র - তলপেট কমানোর উপায় জেনে নিন 

তলপেটের মেদ কি?

তলপেটের মেদ সাধারণ কোন মেদ নয়। এই মেদের অবস্থান শরীরের অনেক গভীর পর্যন্ত গিয়ে থাকে। ত্বক পেরিয়ে একদম অন্ত্রের চারপাশে জমে থাকা চর্বিগুলোই তলপেটের মেদ হিসেবে পরিচিত। অন্যান্য স্থানের মেদের তুলনায় তলপেটের মেদের বৈশিষ্ট্যও কিছুটা আলাদা। এই মেদ বেজায় চটপটে ও সক্রিয়, ফলে রক্তের অভ্যন্তরে কোলেস্টেরল ও গ্লুকোজের মাত্রার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। ফলে তলপেটে ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তলপেট কমানোর জন্য পেটের ঘের কমাতে হবে। 

পেটের ঘের পুরুষের জন্য ৪০ ইঞ্চির কম থাকা আদর্শ। আর নারীদের ক্ষেত্রে ৩৫ ইঞ্চির কম হলে বেশি ভালো হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে পেটের মেদ বাড়তে থাকে কারণ তখন বিপাকের হার কমে যায়। তলপেটের মেদ বৃদ্ধি শরীরে বিভিন্ন জটিলতা ও রোগের সৃষ্টি করতে পারে। তাই সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করার জন্য তলপেটের মেদ কমানো অপরিহার্য। আজকে এই পোস্টের পরবর্তী অংশ হতে আপনারা তলপেট কমানোর উপায় পূর্ণাঙ্গভাবে জেনে নিতে পারবেন। 

তলপেট বৃদ্ধির কারণ

তলপেট কমানোর উপায় জেনে নেওয়ার পূর্বে কি কি কারনে আপনার তল পেটের মেদ বৃদ্ধি পেতে পারে সে সম্পর্কে আগে ধারণা নিয়ে নিন। আমাদের খাদ্যাভ্যাস, চলাফেরা ও জিনগত সহ বিভিন্ন কারণে তলপেট এর মেয়ের বৃদ্ধি পেতে পারে। পেটের উপরের অংশের মেদ কমলেও তলপেটের মেদ কমানো অতটা সহজ নয়। এজন্য অনেকেই তলপেটের মেদ কমাতে না পেরে দুঃচিন্তায় ভোগেন। তবে চলুন তলপেট বৃদ্ধির প্রধান কারণ সমূহ এক নজরে জেনে ফেলি।
  • কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করা। এটি আমাদের দেহে মেদের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাস্থ্য মোটা হওয়ার পাশাপাশি তলপেটের মেদ বৃদ্ধি পায়। 
  • কাজ কম করে অতিরিক্ত ঘুমানো। আপনি যদি দিনের অধিকাংশ সময় ঘুমিয়ে কাটান তবে আপনার তলপেটে মেদ বৃদ্ধি পেতে পারে। 
  • সর্বদা তেল চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ করা। তেল চর্বি জাতীয় খাবারে অতি উচ্চমাত্রায় ফ্যাট উপস্থিত থাকে। যা আমাদের তল পেটের চর্বি বৃদ্ধিতে অন্যতম নিয়ামক।
  • দীর্ঘক্ষণ তেলে ভেজে রাখা খাবার আমাদের দেহের ওজন বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট। যারা অতিরিক্ত ডুবো তেলের খাবার খান তাদের তলপেট বৃদ্ধি পেতে পারে। 
  • অতিরিক্ত মানসিক দুশ্চিন্তার কারণে তলপেটে মেদ বেড়ে যেতে পারে। কারণ অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে আমাদের শরীরের উপর অনেক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে যার ফলে তলপেটের আকার বৃদ্ধি পাওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। 
  • শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম না করা তলপেটের আকার বৃদ্ধির জন্য দায়ী। শারীরিক পরিশ্রম না করলে তলপেটে মেদ জমে তলপেটের আকার বেড়ে যায়। 

তলপেট কমানোর উপায় 

তলপেট কমানোর পূর্বে আপনাদের একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, দেহের ওজন বৃদ্ধি পেলেই মেদ জমে তলপেটের আকার বৃদ্ধি পায়। সেজন্য দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার কোন বিকল্প নেই। এখন আপনাদের সামনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতামত অনুযায়ী তলপেট কমানোর উপায়গুলো উল্লেখ করব। আপনারা যদি নিম্নোক্ত তলপেট কমানোর উপায়সমূহ সঠিকভাবে অনুসরণ করেন তবে নিশ্চিতভাবেই তল পেটের মেদ কমাতে সক্ষম হবেন। 
  • তলপেটের মেদ কমাতে খাবার পরে জোরে জোরে হাঁটুন। দিনের প্রায় অনেকটা সময় হাঁটাহাঁটি করার চেষ্টা করুন। 
  • সময় মত ঘুমাতে যান। সকালে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ঘুমাবেন না বরং ভোরে উঠার চেষ্টা করুন। 
  • সকালে উঠে খালি পেটে দুই গ্লাস পানি পান করুন। কেননা আমাদের মুখের লালায় অনেক রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা রয়েছে। সেটি পেটে গেলে তলপেট কমাতে ভূমিকা রাখবে। 
  • কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বর্জন করুন, কেননা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেলে এটি ভবিষ্যতে ফ্যাটে পরিণত হয়। 
  • বহিরের তেল চর্বি জাতীয় জাঙ্ক ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত তেল চর্বি জাতীয় খাবার আমাদের দেহে ফ্যাটের মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। 
  • বেশি বেশি পানি পান করুন। যত বেশি পানি খাবেন আপনার দেহে তত রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা জন্মাবে। 
  • প্রত্যেক দিনের খাবারে বেশি বেশি শাক-সবজি, ফলমূল রাখার চেষ্টা করুন। এগুলো আপনার দেহের অতিরিক্ত ফ্যাট কাটাতে ভূমিকা রাখবে। এতে করে তলপেটের আকার কমে যাবে। 
  • এক গ্লাস পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে সেটি খেতে পারেন। তবে অবশ্যই পানিতে চিনি মেশাবেন না, মধু মেশাতে পারেন। এই পানীয় বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় তলপেটের মেদ কমাতে ভূমিকা রাখে। 
  • সাদা ভাত ডায়েট চার্ট থেকে বাদ দিয়ে লাল ভাত ইনক্লুড করুন। অথবা ভাতের বদলে রুটি বা পরোটা খেতে পারেন।
  • সকল প্রকার মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন: আইসক্রিম, চকলেট ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখবেন তলপেটের মেদ কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো চিনি। তাই চিনি জাতীয় সকল খাবার বর্জন করুন। 
  • আশা করি পোষ্টের এই অংশটি থেকে আপনারা তলপেট কমানোর উপায় বিস্তারিত জেনে ফেলেছেন। তলপেট কমাতে চাইলে সকাল বিকাল নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন।

তলপেট কমানোর ব্যায়াম 

প্রিয় বন্ধুর আপনারাই ইতোমধ্যে তলপেট থিকভাব উপায় সম্পর্কে জেনেছেন। তলপেটের মেদকে চিরতরে বিদায় করার জন্য অন্যতম কার্যকর উপায় হতে পারে ব্যায়াম করা। বিভিন্ন প্রকার ব্যায়াম করার মাধ্যমে আপনারা তলপেটের মেদ কমিয়ে পেটকে একটি সুন্দর আকৃতি প্রদান করতে পারবেন। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করার চ্যালেঞ্জ আপনাকে গ্রহণ করতে হবে। চলুন কি কি ব্যায়াম করলে তলপেট কমবে সে সকল ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে ফেলি।
  1. বোটিং: এ ব্যায়ামটি করার জন্য প্রথমে আপনাকে মেঝেতে চিত হয়ে বসতে হবে। তারপর পা দুটি উপরে তুলুন, হাত দুটি সোজা করে কোমর বরাবর সমান্তরালে রাখুন। পা তোলা অবস্থায় আপনার শরীরের কোমরের উপরের অংশ এমনভাবে রাখুন যেন সমকোণ সৃষ্টি হয়। এভাবে চার-পাঁচবার করে জোরে জোরে শ্বাস নিন। 
  2. লেগ রেইজ: চিত হয়ে শুয়ে পা দুটি ৯০ ডিগ্রী অ্যাঙ্গেলে উপরে তুলুন। তারপর নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পা দুটি হালকা করে নিচে নামান। লক্ষ্য রাখবেন যেন পা মাটি থেকে কিছুটা উপরে থাকে এতে করে পেটের উপরে চাপ পড়বে। ফলে তলপেট কমানো সহজতর হবে। 
  3. নী টু চেষ্ট: শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে চিত হয়ে শোয়া অবস্থায় পা ভাঁজ একদম বুকের কাছে নিয়ে আসুন। এভাবে কয়েকবার করতে থাকুন। পা মাটিতে রাখার সময় কিছুটা উপরে রাখবেন, ফলে পেটের ওপরে চাপ পড়বে। এই ব্যায়ামটি তলপেট কমানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর। 
  4. ভার উত্তোলন: তলপেট কমানোর অন্যতম কার্যকর ব্যায়াম হিসেবে ভার উত্তোলন করতে পারেন। এটি আপনার ওজনকে ধীরে ধীরে কমিয়ে দিবে, এমনকি পেটের একটি সুন্দর আকৃতি প্রদান করবে। তাই প্রত্যেকদিন হালকা ভার উত্তোলন করুন। ভার উত্তোলনের সময় পেশিতে যেন টান না লাগে সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখুন। 
  5. সিট আপ: এই ব্যায়ামটি করার জন্য উভয় পা ভাঁজ করে মেঝেতে শুয়ে পড়ুন। তারপর হাত সোজা রেখে শ্বাস নিতে থাকুন। এভাবে বসা অবস্থায় কয়েকবার শরীরকে মাটি থেকে উঠানামা করান। এভাবে দিনে অন্তত ১২ থেকে ১৫ বার করতে থাকেন। কিছুদিনের মধ্যেই আপনার পেটের মেদ কমতে শুরু করবে। তলপেট কমানোর উপায় পুনরায় দেখে নিতে পোস্টের আগের অংশ আাবারও পড়ে ফেলুন। 

উপসংহার 

প্রিয় বন্ধুরা আশা করি এই পোস্টটি পড়ে আপনারা তলপেট কমানোর উপায় সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা লাভ করেছেন। আপনাদের তলপেটের মেদ কমিয়ে পেটকে সুন্দর একটি আকৃতি দিতে এই পোস্টে উল্লেখিত তথ্যগুলো যথেষ্ট উপকারী হবে বলে আশা করছি। সর্বোপরি তলপেট কমানোর উপায় অন্যদের জানাতে চাইলে এখনই এই পোস্টটি শেয়ার করে ফেলুন। দৈনন্দিন জীবনের স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক আরো গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পেতে সর্বদা আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। @23891

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url