কিভাবে বুঝবেন আপনি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত
সুস্থ থাকা সত্ত্বেও কিভাবে বুঝবেন আপনি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত যা আপনাকে নীরব ঘাতকের মত শেষ করে দিচ্ছে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কিভাবে বুঝবেন আপনি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত সেই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। শ্বেত রক্ত কণিকা থেকে সৃষ্ট এই রোগের ধরন না জেনে কিভাবে বুঝবেন আপনি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন।
রক্তস্বল্পতা হওয়ার ফলে সৃষ্ট এই শ্বেত রক্তকণিকা যখন সমস্ত কার্যক্রম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, তখনই ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে ব্লাড ক্যান্সার। হঠাৎ করেই ক্রোমোজোমের মিউটেশন কাজ বন্ধ করে দিলে অনকজিন নামক একটি জিন যদি অ্যাক্টিভেটেড হয়ে যায়, তাহলে আপনার কোষের ব্লাড ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়ে যায়। যার থেকে ব্লাড ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়।
পেজ সূচিপত্র
- ব্লাড ক্যান্সার কিভাবে শুরু হয়
- দীর্ঘস্থায়ী ব্লাড ক্যান্সার কেন হয়
- ব্লাড ক্যান্সারের শেষ পর্যায় কোনটি
- কিভাবে বুঝবেন আপনি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত
- ব্লাড ক্যান্সার কি নিরাময় করা যায়
- ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা কি
- শেষকথা
ব্লাড ক্যান্সার কিভাবে শুরু হয়
আপনার শরীরের দেহ কাঠামোর কোষের মধ্যে যেই জিন রয়েছে, সেই জিনগুলো দেখে কিভাবে বুঝবেন আপনি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। যখন ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয়ে যায় অর্থাৎ পরিবর্তন হওয়া শুরু করলে অনেক সময় এটি ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়ে যায়। এই সময় যদি কোন কারণে আপনি বুঝতে পারেন যে আপনার শরীরের জিন ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে।
তখন এটি নিজেও পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে বা অন্য কোন কারণেও তার পরিবর্তন দেখা দেয়। এই বিষয়টি আপনার হতে পারে অনেকেই দেখা যায়, তামাক খাওয়ার অভ্যাস থাকে, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিতে অবস্থান করার ফলে অথবা নেশা জাতীয় দ্রব্য, ধূমপান ও অ্যালকোহল ইত্যাদি পান করার ফলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরও পড়ুনঃ ব্লাড ক্যান্সার হলে কি হতে পারে
তাই এই সময় কিভাবে বুঝবেন আপনি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনার শরীরে ইমিউন সিস্টেমের মাধ্যমে আপনার শরীরের কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। মাঝে মাঝে দেখা যায়, আপনার শরীরে ক্যান্সারের যেই কোষগুলি রয়েছে সেইগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা করতে পারেনা। যার ফলে ব্লাড ক্যান্সারের মতো আক্রান্ত হতে হয়।
যখনই এই ক্যান্সার আপনার শরীরের কোষে ছড়িয়ে পড়ে, তখনই টিউমার বা পিণ্ড শরীর থেকে বের হয়ে যায়। যদি আপনি এই সময়ে আপনার শরীরের সঠিক চিকিৎসা না করেন, তাহলে এই সমস্যা আপনার সারা শরীরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
যেহেতু মানুষের শরীরের রক্ত কণিকায় এই ব্লাড ক্যান্সার উৎপন্ন হয়। তাই ব্লাড ক্যান্সার হওয়া শুরু হলে আপনার শরীরে রক্তের ঘাটতি দেখা দিতে পারে এবং দ্রুত আপনার পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী ব্লাড ক্যান্সার কেন হয়
ব্লাড ক্যান্সার কখনো হওয়ার পরে ধীরে ধীরে এটিকে সারানো যায় আবার কিছু ব্লাড ক্যান্সার রয়েছে যা ধীরে ধীরে দীর্ঘ সময় ধরে হতে থাকে। কিভাবে বুঝবেন আপনি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্লাড ক্যান্সার কেন হয় চলুন সেই সম্পর্কে জেনে আসি।- আপনার কোষের জিনগুলিতে যদি কোন কারনে মিউটেশন ঘটে।
- কোষ বিভাজনের সময় যদি অস্বাভাবিক কিছু সংকেত দেখা দেয়।
- নানা ধরনের তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে হতে পারে।
- হাড়ে ব্যথা হওয়ার কারণে দীর্ঘস্থায়ী ব্লাড ক্যান্সার হতে পারে।
- অনেকের আবার ওজনও হ্রাস পেতে থাকে।
- খাবারের অরুচি ও শরীর দুর্বল হয়ে পড়লে সমস্যা হতে পারে।
- যদি আপনার স্কিন লিভার বড় হতে থাকে।
- শরীরের মধ্যে যদি অনেক বেশি রক্তস্বল্পতা হয়ে যায়।
- রাতে যদি অতিরিক্ত ঘাম হয়, তাহলে লিম্ফোমা ও লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এই সমস্যা হতে পারে।
ব্লাড ক্যান্সারের শেষ পর্যায় কোনটি
ব্লাড ক্যান্সারের সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে হচ্ছে শেষ যেই পর্যায়টি থাকে। এই পর্যায়ে একজন রোগীর রক্তে প্লেটলেটের পরিমাণ এতটাই কমে যায় যে, কোষগুলি খুব সহজে সংক্রমিত হয়। তখনই রোগীর ফুসফুসে ম্যালিগন্যান্ট যেই কোষ রয়েছে সেটি সংক্রমিত হওয়া শুরু হয়ে যায়।যার ফলে অন্যান্য অঙ্গগুলিও এর প্রভাবে সংক্রমিত হয়। ব্লাড ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ে মেটাস্টেসিসের উৎপত্তির ফলে এটি সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে যার ফলে রোগীর শরীরে প্রচন্ড ব্যথা সৃষ্টি হয়। সমস্যাটা এই কারণেই থেকে যায় যে একজন ব্লাড ক্যান্সার রোগীর ব্যথা ঠিক কখন শুরু হতে পারে সেটা ঠিকভাবে বলা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।
ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় অপারেশনের পরবর্তী সময়ে এই ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে। অথবা অন্যান্য জটিল কোন কারণে ব্যথা হতে পারে। কিভাবে বুঝবেন আপনি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং এর শেষ পর্যায়ে ব্যথা এতটাই বেড়ে যায় যে, তার জীবননাশেরও সম্ভাবনা থাকে।
কিভাবে বুঝবেন আপনি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত
ব্লাড ক্যান্সার খুবই মারাত্মক একটি ব্যাধি যা একবার শরীরে সৃষ্টি হলে তা সারানো খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। কিভাবে বুঝবেন আপনি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত? ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার অনেক ধরনেরই কারণ থাকতে পারে। যদি আপনার শরীরে দীর্ঘদিনের কোন জ্বর থেকে থাকে, শরীরে যদি রক্তশূন্যতার সমস্যা দেখা দেয়।ত্বকে যদি লাল লাল কোন ফুসকুড়ি দেখা যায়, আপনার হাড়ে যদি ব্যথা অনুভব হয়, দাঁতের মাড়ির গোড়া দিয়ে যদি রক্ত বের হয় এবং এই সংক্রমণ যদি আপনার বারবার হতে থাকে তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে আপনি ব্লাড ক্যান্সারে সংক্রমিত হয়েছেন। ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে কিনা এটা নিশ্চিত হবার জন্য আপনাকে রুটিন পরীক্ষা করতে যেতে হবে।
আরও পড়ুনঃ বড়দের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ কি জানুন
অর্থাৎ আপনার রক্তের কাউন্ট করতে হবে এবং পেরিফেরাল ব্লাড ফিল্ম আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। বেশিরভাগ সময়েই এটি ব্লাড ক্যান্সার নিশ্চিতকরণে সাহায্য করে। তবে আপনি বোনম্যারো পরীক্ষাও করতে পারেন। যার মাধ্যমেও ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়।
ফ্লোসাইটোমেট্রি, ইমিউনোফেনোটাইপিং এই ধরনের আধুনিক পরীক্ষাগুলো করে নিশ্চিত হতে পারেন। এই পরীক্ষা এখন আপনি খুব সহজেই সরকারি হাসপাতাল গুলোতেও করতে পারবেন। এছাড়াও আপনি জেনেটিক্স পরীক্ষা করলে কেমোথেরাপির ধরন সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারবেন।
কিভাবে বুঝবেন আপনি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত যা রোগ নির্ণয় করতে খুবই সাহায্য করবে। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ও আধুনিক কেমোথেরাপি এর মাধ্যমে রোগীরা এখন খুব সহজেই সুস্থ হয়ে উঠছেন।
ব্লাড ক্যান্সার কি নিরাময় করা যায়
ব্লাড ক্যান্সার সাধারণত ক্যান্সারের বিভিন্ন পর্যায়ের উপর বিচার বিশ্লেষণ করে কিভাবে বুঝবেন আপনি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত, ক্যান্সারের অবস্থানকে নির্ণয় করে ও রোগীর স্বাস্থ্যকে পর্যালোচনা করে নিরাময়ের জন্য চেষ্টা করতে পারেন। ব্লাড ক্যান্সার কি নিরাময় করা যায় কিনা চলুন সেই বিষয়ে ধারণা নিয়ে আসি।
- ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করার জন্য রজনরশ্মি দ্বারা এক ধরনের উচ্চশক্তি টাইপের রশ্মি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- ইমিউনোথেরাপি এমন একটি থেরাপি যেটি আপনার ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।
- এছাড়াও সার্জিক্যাল অপসারণ এর জন্যে আপনার শরীরের যেকোনো নির্দিষ্ট একটি অঙ্গ যদি কোনভাবে ক্ষতি হয়ে যায়, তাহলে অপসারণ করারও প্রয়োজন পড়তে পারে।
- কমডোজের রাসায়নিক মিশ্র প্রয়োগের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলা যায়।
- জৈবিক থেরাপি নামে কিছু হালকা ধরনের ওষুধ দিতে পারে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা কি
কিভাবে বুঝবেন আপনি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত? যদি আপনি জানতে চান তাহলে আপনাকে কেমোথেরাপি সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। কারণ এই কেমোথেরাপির মাধ্যমে ব্লাড ক্যান্সার অনেক বেশি আরোগ্য লাভ করে থাকে। কেমোথেরাপি ব্লাড ক্যান্সারে সবচাইতে বেশি ব্যবহার করা হয়।আরও পড়ুনঃ জন্ডিস হলে কি প্রতিকার নিতে পারেন
এই ওষুধগুলি শিরা অথবা মৌখিকভাবেও দেওয়া যেতে পারে। রক্ত প্রবাহে ওষুধ প্রবেশ করার ফলে ক্যান্সার কোষগুলো মরে যায়। কেমোথেরাপির পাশাপাশি আপনাকে অন্য আরও অনেক ধরনের থেরাপি দিতে পারে এর একটি হচ্ছে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন। চিকিৎসা পদ্ধতির আরও নতুন কিছু কৌশল রয়েছে।
যেমন নতুন ধরনের ওষুধের সংমিশ্রণ এবং কেমোথেরাপির ওষুধের সাথে কোষ প্রতিরোধ করার নতুন ধরনের কিছু উপায় থাকতে পারে। যখনই আপনি চিকিৎসা নেবেন ব্লাড ক্যান্সারের জন্য তখন ভালোভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলার চেষ্টা করবেন।
শেষকথা
আশা করছি কিভাবে বুঝবেন আপনি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত সেই বিষয়ে এই পোস্টের মাধ্যমে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আশেপাশের সকলকে ব্লাড ক্যান্সার সম্পর্কে অবগত করুন। যদি বিস্তারিত ভালো লেগে থাকে তাহলে পোস্টের নিচের অংশে মন্তব্য করুন এবং আমাদের পাশেই থাকুন। ২৫২৭৫
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url