তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম - তুলসী পাতা খেলে কি হয়

তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম ও তুলসী পাতা খেলে কি হয় এই বিষয়টি কি আপনি জানতে চাচ্ছেন? তবে আপনি সঠিক পোস্টেই  প্রবেশ করেছেন। আজকের এই পোস্টে তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম এবং তুলসী পাতা খেলে কি হয় এই বিষয়টি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব। অতএব, তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম জানতে হলে এই সম্পূর্ণ পোস্টটি গুরুত্ব সহকারে পড়ুন।
তুলসী পাতার বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে আমরা জানি। কিন্তু কিভাবে তুলসী পাতা খেলে সেটি আমাদের দেহের জন্য উপকারী হবে তা অনেক সময় বুঝতে পারিনা। সেজন্য আমাদের প্রত্যেকেরই তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম জেনে রাখা উচিত। আজকের এই পোস্টটি যদি আপনারা গুরুত্ব সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ে ফেলেন তবে তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম ও তুলসী পাতা খেলে কি হয় তা পূর্ণাঙ্গভাবে অবহিত হতে পারবেন। সেই-সাথে তুলসী পাতার উপকারী দিকগুলোও আপনাদের জানা হয়ে যাবে।

পোস্ট সূচিপত্র - তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম ও তুলসী পাতা খেলে কি হয় জেনে নিন।

তুলসী পাতা কতটা উপকারী? 

তুলসী পাতার এত এত গুনাগুন রয়েছে যে তুলসী পাতাকে "কুইন অফ হার্বস" নামে অভিহিত করা হয়। গত প্রায় ৫০০০ বছর যাবত ত্বক ও শরীরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আয়ুর্বেদ, ভেষজ ও আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রে ব্যাপকভাবে তুলসী পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে। শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা পরিলক্ষিত হলেই চিকিৎসকরা অনেক সময় তুলসী পাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, তুলসী পাতার ঔষধি গুনাগুন প্রচুর। বিভিন্ন রোগে প্রতিষেধক ওষুধ তৈরিতে তুলসী পাতার রস ব্যবহার করা হয়। তুলসী পাতার এত গুনাগুনের কথা বিবেচনা করে অবশ্যই বাড়ির আশেপাশে তুলসী গাছ লাগাতে পারেন। এই পোস্টের পরবর্তী অংশ থেকে আপনারা তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম জানতে পারবেন।

তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম 

তুলসী পাতা খাওয়ার সবচেয়ে আদর্শ উপায় হচ্ছে, চায়ের মাধ্যমে খাওয়া। তুলসি চা খেলে তা সকল রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ত্বকের ইনফেকশন দূর করতে চায়ের সাথে তুলসী পাতা খাওয়া যেতে পারে। তুলসী চা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তুলসী চা বানানোর জন্য একটি কাপের ১/৪ অংশ তুলসী পাতা ভালোভাবে পানিতে ফুটিয়ে নিন। পাতা ফুটে গেলে দশ মিনিট ঠান্ডা পানিতে সেই পাতা সুন্দর মতো ভিজিয়ে রাখুন।
এখন তার মধ্যে এক চা-চামচ লেবুর রস ও ২ চা-চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। তুলসী পাতা খাওয়ার সর্বোত্তম উপায় হল চায়ের মধ্যে মিশিয়ে তা খাওয়া। চায়ের মধ্যে মিশিয়ে খেলে তুলসী পাতার সকল গুনাগুন চায়ে উপস্থিত থাকে। আপনারা চাইলে তুলসী পাতার চায়ের মধ্যে অন্যান্য প্রয়োজনীয় গুল্ম মিশিয়ে খেতে পারেন। তুলসী চায়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি ক্যাফেইনমুক্ত এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যুক্ত। আশা করি কার্যকর ভাবে তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম সকলে বুঝতে পেরেছেন। 

তুলসী পাতা খেলে কি হয় 

এই পোস্টের আগের অংশ থেকে আপনারা ইতোমধ্যে তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। উক্ত নিয়ম অনুসরণ করে চায়ের মাধ্যমে তুলসী পাতা খেলে আপনারা সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন। তুলসী পাতার হাজারো উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্যে হতে এখন আপনাদের সামনে তুলসী পাতা খাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইতিবাচক দিক তুলে ধরবো। এতএব, তুলসী পাতা খেলে কি হয় সেটি জানার জন্য পোস্টের এই অংশটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন। 
  • মানসিক চাপ কমাতে: তুলসী পাতায় প্রচুর পরিমাণে এন্টি এনফ্লামেটরি ও রোগ প্রতিরোধ করার উপাদান রয়েছে, যা আপনার সারাদিনের ক্লান্তি এক নিমিষে দূর করতে পারে। সর্বোপরি তুলসী পাতা মানসিক চাপ কমিয়ে মনকে প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে "মানসিক চাপমুক্ত" থাকার জন্য তুলসী পাতাকে ঔষধি উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 
  • চুল পড়া বন্ধ করতে: চুলের গোড়া মজবুত করে চুল পড়া রোধ করতে ভীষণ কার্যকর হলো তুলসী পাতা। এর পেছনে কাজ করে তুলসী পাতায় উপস্থিত থাকা এন্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান। 
  • ডায়াবেটিস প্রতিরোধে: যারা টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের জন্য দেহে ইনসুলিন উৎপাদন করে থাকে তুলসী পাতা। রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে চাইলে প্রতিদিন খাবার পূর্বে কিছুটা পরিমাণ তুলসী পাতা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে। 
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে: ক্যান্সার প্রতিরোধেও দারুন কার্যকরী এক উপাদান হল তুলসী পাতা। তুলসী পাতায় উপস্থিত রেডিওপ্রটেকটিভ উপাদান গুলো টিউমার কোষগুলিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধে তুলসী পাতা দারুন কার্যকর। 
  • হার্টের রোগ নিরাময়ে: নিয়মিত তুলসী পাতা খেলে এটি রক্তের জমাট বাঁধার সমস্যা দূর করে। বর্তমানে আমাদের সমাজে হার্টের বিভিন্ন সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। কোলেস্ট্রেরল ও ফ্যাট কমিয়ে হার্ট অ্যাটাক সহ বিভিন্ন হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে অসামান্য অবদান রাখে এই তুলসী পাতা। 
  • চোখের সমস্যা প্রতিষেধক: চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে অঞ্জনি হওয়া বা চোখে ছানি পড়া ইত্যাদি যাবতীয় সমস্যার সমাধানে তুলসী পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। তুলসী পাতায় উপস্থিত অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান গুলো চোখের সমস্যা দূর করে আমাদের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। 
  • ওজন কমাতে: অনেক সময় দেহের অতিরিক্ত ওজন বিভিন্ন রোগব্যাধির কারণ হতে পারে। তুলসী পাতা যেহেতু রক্তে কোলেস্টরেল ও শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়, তাই নিয়মিত তুলসী পাতা খেলে দেহের অতিরিক্ত ওজন কমানো সম্ভব। 
  • ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ: তুলসী পাতা বিভিন্ন ধরনের ফুসফুসের রোগ যেমন: শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস ইত্যাদির বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকর। 
  • লিভারের রোগ প্রতিরোধে: গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে তুলসী পাতায় প্রচুর পরিমাণে হেপাটোপ্রটেকটিভ উপাদান রয়েছে, যা যথাসম্ভব লিভারকে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। 
  • রক্ত চলাচল স্বাভাবিক: সমগ্র দেহে রক্ত জমাট না বাঁধিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে তুলসী পাতা ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করে। আশা করি এই সম্পূর্ণ অংশটি থেকে আপনারা তুলসী পাতা খেলে কি হয় তা বুঝতে পেরেছেন। আর তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম জানার জন্য পোস্টের পূর্ববর্তী অংশ পুনরায় দেখুন। 

তুলসী খাওয়ার ক্ষতিকর দিক

তুলসী পাতার যে কেবল উপকারীর দিকই রয়েছে তা কিন্তু নয়। তুলসী পাতা খাওয়ার বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক লক্ষণীয়। আপনারা ইতোমধ্যে তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম জেনেছেন। এবার আপনারা তুলসী পাতা খেলে কি হয় তথা তুলসী পাতা খেলে আপনার কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে এমন কিছু দরকারী বিষয় উল্লেখ করবো। 
  • গর্ভবতী মায়েদের জন্য তুলসী পাতা খাওয়া ততটা আদর্শ নয়। উপকারের আশায় অনেক সময় অতিরিক্ত তুলসী পাতা খাওয়ার কারণে নারীদের বন্ধ্যাত্ব হওয়ার মতো জটিল সমস্যা সৃষ্টি হতে দেখা গিয়েছে। তাই গর্ভবতী নারীদের তুলসী পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। 
  • আমাদের শরীরে কোথাও কেটে গেলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রয়োজন হয়। কিন্তু অতিরিক্ত তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে দেহে রক্তের পরিবহন এতটাই বেড়ে যায় যে তা সমগ্র রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে নষ্ট করে ফেলে। সেজন্য সার্জারি বা কোন অপারেশনের পূর্বে পুরোপুরি তুলসী পাতা খাওয়া পরিত্যাগ করুন। 
  • যাদের নিম্ন রক্ত চাপের সমস্যা রয়েছে তাদের তুলসী পাতা না করাই ভালো। কেননা তুলসী পাতায় অতিরিক্ত পটাশিয়াম উপস্থিত থাকার কারণে এটি শরীরের স্বাভাবিক রক্ত চলাচল প্রক্রিয়াকে অনেক নিম্নগামী করে দেয়। যা অনেকের দেহের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। 
  • যাদের এলার্জির সমস্যা হয়েছে তাদের তুলসী পাতা এড়িয়ে চলা উত্তম। কারণ তুলসী পাতা এমন কিছু উপাদান অবস্থিত রয়েছে যা ত্বক অথবা অন্যান্য স্থানে এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে। অতএব তুলসী পাতা খেলে কি হয় তা এখন আপনারা পূর্ণাঙ্গভাবে বুঝে গেলেন। তবে তুলসী পাতা খাওয়ার জন্য পোস্টের উপর অংশে বর্ণিত তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম অবশ্যই অনুসরণ করবেন। 

ইতি কথা

প্রিয় পাঠক, আপনারা যদি এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তবে নিশ্চিতভাবেই তুলসী পাতা খেলে কি হয় এবং তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম কোনটি অধিক কার্যকরী সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়েছেন। তাই তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী তুলসী পাতা খেলে আপনিও শারীরিকভাবে উপকৃত হতে পারবেন। পরিশেষে আপনি যদি তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম আপনার বন্ধুদের জানাতে চান তবে এই পোস্টটি শেয়ার করুন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক আরো প্রয়োজনীয় আর্টিকেল পড়তে চাইলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। @23891

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url