বাংলাদেশের কোথায় কারি পাতা পাওয়া যায় - কারি পাতার বৈশিষ্ট্য

সুগন্ধি মসলা হিসেবে বাংলাদেশের কোথায় কারি পাতা পাওয়া যায় তা কি জানেন। এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা আপনাকে জানাবো বাংলাদেশের কোথায় কারি পাতা পাওয়া যায়। তাই একটি পরিচিত উপাদান হিসেবে এবং রান্নায় উপযোগী বলে বাংলাদেশের কোথায় কারি পাতা পাওয়া যায় এই বিষয়ে জানতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত জেনে নিন।
কারি পাতায় একটি সুন্দর ঝাঁঝালো গন্ধ রয়েছে যা রান্নার স্বাদকে অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে। কারি পাতা থেকে গোলমরিচ, লবঙ্গ, আদা ইত্যাদি বিভিন্ন মসলার মিশ্রিত একটি ঘ্রাণ বের হয়। যার ফলে এই সুগন্ধির কারণেই রান্নায় এটি ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যবহারের জন্য কারি পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে পাউডার হিসেবে বোতলে করে রাখা হয়। 

পেজ সূচিপত্র

কারি পাতা চেনার উপায়

কারি পাতার গাছ অনেকটা কামিনী ফুলের মত দেখতে হয় তাই ভুল করে এটিকে কামিনী ফুল ভাবা যাবে না। চেনার জন্য এর কিছু বিশেষ গুণাবলী রয়েছে যেমন কারি পাতা অনেকটা মাঝারি আকৃতি হয়ে থাকে। কারি পাতার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে খুব বেশি বড় হয় না আবার খুব বেশি ছোটও না। এর প্রতিটি অনুপত্রকে কিনারা দিয়ে খাঁচ কাটা ভাব থাকে সামনের দিকে সূচালো হয়। 

আরও পড়ুনঃ থানকুনি পাতা চেনার উপায় কি জানেন

কারি পাতা অনেক বেশি ঘ্রাণ যুক্ত হয় বলে এটি রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। কারি পাতা গাছও পরিপক্ক হলে ছোট ছোট ফল ধরতে পারে। বিশেষ করে এই ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ রং ধারণ করে এবং পাকা অবস্থায় ধীরে ধীরে লালচে থেকে কালো হতে থাকে। আপনার শরীরের কোথাও যদি বিষাক্ত কোন পোকামাকড় কামড় দিয়ে ফেলে, তাহলে এই কারি পাতাকে ব্যবহার করলে অনেক দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।

কারি পাতা দেখতে কেমন

বাংলাদেশের কোথায় কারি পাতা পাওয়া যায় তা জানেন কি? অনেকেই কারি পাতাকে চিনতে পারেনা বলে নিমপাতা বলে মনে করে। কিন্তু কারি পাতা কখনোই অনেক বড় আকৃতির গাছ নয়। এটি অনেকটা মাঝারি উচ্চতার হয়ে থাকে যার গুঁড়ি বা কান্ডের ব্যাস অনেকটা চল্লিশ সেন্টিমিটার পর্যন্তও হতে পারে। 

কারি পাতার বৈশিষ্ট্য দেখে কখনো বা অনেকে এটিকে কামিনী ফুলের গাছও মনে করে থাকে। যেহেতু কারিপাতা ও কামিনী ফুলের গাছ দুটি একই গোত্রের হয়ে থাকে তাই দেখতে অনেকটা দুটি গাছ একই রকমের হয়। কিন্তু কারি পাতা অত্যন্ত সুগন্ধি এবং তীব্র ঘ্রাণযুক্ত হয়।

কারি পাতা গাছের সাদা রংয়ের ফুল ফুটে এবং সেই ফুল থেকে তীব্র সুগন্ধি ঘ্রাণও বের হয়। কিছুদিন পর কারি গাছে নিম ফলের মত ফল দেখা যায়। যা প্রথম দিকে সবুজ রং ধারণ করে ধীরে ধীরে লালচে থেকে কালচে রং ধারণ করে।

কারি পাতার বৈশিষ্ট্য কি 

আপনি কি কখনো কারি পাতা গাছ দেখেছেন? বাংলাদেশের কোথায় কারি পাতা পাওয়া যায় তা জানেন কি? কারি পাতা এমন একটি গোত্রের গাছ যা মাঝারি উচ্চতার হয়ে থাকে। কারি পাতার বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে চলুন জেনে নিই।

  • কারি পাতা এর ধরন লম্বায় অনেকটা উচ্চতার দিক থেকে পাঁচ থেকে ছয় মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
  • যদি কেউ পূর্ব থেকে কারি পাতা না চিনে তাহলে এই পাতাকে নিমপাতা বলেও মনে করে ফেলতে পারে।
  • এর প্রতিটি পাতায় রয়েছে নয় থেকে পনেরোটি অনুপত্রক।
  • কারি পাতার অনুপত্রক গুলোর কিনারা খাজ কাটা হয় এবং সামনের দিকটা অনেক বেশি সূচালো হয়।
  • পাতায় অনেক বেশি তীব্র ঘ্রাণ থাকে।
  • কারি পাতার ডালে পুষ্প মঞ্জুরীতে সাদা রঙের অনেক ফুল দেখা যায়, সেই ফুলগুলো থেকেও অনেক বেশি সুগন্ধ পাওয়া যায়।
  • নিম গাছের মত কারি গাছের ও ফল হয়ে থাকে যা দেখতে অনেকটা ডিম্বাকার থেকে গোলাকার হয়ে যায় এবং এর কাঁচা ফলের রং অনেকটা সবুজ আকৃতির হয়।
  • কারি পাতার ফল যখন অনেক ভালোভাবে পরিপক্ক হয় তখন লালচে কালার থেকে এটা ধীরে ধীরে কালচে কালার হতে শুরু করে।
  • যখন কারি পাতার ফল কালো রং ধারণ করে তখন এই পাকা ফলটি খেতেও পারবেন কিন্তু এর বীজ খুবই বিষাক্ত হয় তাই কারি পাতার ফল খাওয়ার সময় একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

কারি পাতার চাষাবাদ পদ্ধতি

কারি পাতা চাষাবাদ পদ্ধতির জন্য আপনাকে প্রথমে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। বীজ সংগ্রহ হয়ে যাওয়ার পর প্রথমে বৃষ্টি আপনাকে মাটিতে লাগিয়ে দিতে হবে। তবে কারি পাতা গাছের বড় হওয়ার জন্য আপনি একটু উঁচু জায়গায় বেলে দোআঁশ মাটিতে লাগিয়ে দিবেন। বিশেষ করে সমতল ও পাহাড়ি এলাকায় কারি পাতার গাছ চাষ করতে পারেন।

এছাড়াও বাংলাদেশের কোথায় কারি পাতা পাওয়া যায় তা জানেন কি? আপনার বাড়ির আশেপাশে যেসব বাগানের ভেতরে একটু ছায়ার মধ্যে ফাঁকা জায়গা রয়েছে সেই সকল জায়গাগুলোতে কারি পাতার চারা লাগিয়ে দিতে পারেন। মাটিতে চারা লাগানোর জন্য আপনাকে কমপক্ষে আধা মিটার অনুমান করে একটি গর্ত তৈরি করে নিতে হবে।

সেই গর্তে মাটির সাথে এক থেকে দুই ঝুড়ি গোবর মিশিয়ে তিন থেকে চার সপ্তাহের জন্য রেখে দিতে হবে। যখন এই গোবর এবং মাটি একসাথে সারে পরিণত হয়ে যাবে তখন আপনার কারি পাতার চারা গাছটি লাগিয়ে দিতে হবে। কারি পাতা চাষ করার জন্য উপযুক্ত সময় জুন জুলাই মাস থেকে শুরু হয়।

আরও পড়ুনঃ কমলা গাছের পরিচর্যা এবং যত্নের পদ্ধতি

তবে প্রত্যেক বছরই আপনাকে জুন জুলাই মাসে প্রতি গাছে একবার করে হলেও ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। অবশ্যই কারি পাতা গাছকে বড় করার জন্য খরার সময়ে অতিরিক্ত সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা আপনাকে রাখতে হবে। কারি পাতা গাছের বয়স যখন তের থেকে পনের মাস হয়ে যাবে, তখন আপনি এই গাছ থেকে পাতা নিতে পারবেন।

অবশ্যই আপনাকে পাতা তোলার সময় একটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যে কচি পাতা তুলছেন কিনা। বিশেষ করে কারি পাতার বৈশিষ্ট্য জেনে কচি পাতা না তুলে কারি পাতার গাছের গোড়ার দিক থেকে বয়স্ক পাতা যদি তুলেন তাহলে সেগুলো বাজারজাতও করতে পারবেন।

যেহেতু, কারি পাতা তীব্র সুগন্ধিযুক্ত একটি গাছ যা রান্নায় মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কারি পাতা শুধু রান্নাই নয় পাশাপাশি ভেষজ গুণেও গুণান্বিত তাই যদি আপনি কারি পাতার গাছের চাষ করে থাকেন তাহলে এই গাছকে অনেক কাজই লাগানো যাবে যার প্রয়োজন অতুলনীয়।

বাংলাদেশের কোথায় কারি পাতা পাওয়া যায়

কারি পাতা অনেকের ক্ষেত্রেই, বেশি পরিচিত এমন একটি উপাদান যা স্বাদ এবং ঘ্রাণে পরিপূর্ণ। আপনি যদি ঢাকায় একটু ভালো করে খুঁজে দেখেন যে, কোন বড় ধরনের সবজির বাজারে এই কারি পাতা খুজে পাবেন। তবে ঢাকায় কিছু কিছু বড় সবজির বাজারে কারি পাতা খুঁজে পাওয়া গেলেও কারি পাতাকে ঢাকায় খুব বেশি একটা রন্ধন প্রণালীতে ব্যবহার করে না।

বাংলাদেশের কোথায় কারি পাতা পাওয়া যায় তা জানেন কি? তাই আপনি ঢাকায় সব ধরনের বাজারে কারি পাতা পাবেন না। বাংলাদেশে কারি পাতাকে বারসুঙ্গা নামেও ডাকা হয়। যেহেতু কারি পাতা আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

বাংলাদেশের কোথায় কারি পাতা পাওয়া যায় তা জেনে আরও অনেক ধরনের রোগের সমস্যা যেমন ডায়রিয়া, আমাশয় এবং কোন ধরনের পোকামাকড় যদি কামড় দেয় সেইক্ষেত্রে এই কারি পাতাকে ব্যবহার করা হয়। অবশ্য এই কারি পাতাকে সবচাইতে বেশি ঝোল জাতীয় রান্নায় ব্যবহার করা হয় যার ফলে রান্নায় এক ভিন্ন স্বাদ সৃষ্টি হয়।

ভেষজ চিকিৎসায় কারি পাতা কি কাজে লাগে

কারি পাতা এমন একটি গাছ যে এটি শুধু রান্নার কাজেই ব্যবহৃত হয় না। এটিকে ভেষজ চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা হয়। কারি পাতা গাছের যতগুলো শেকড় হয়ে থাকে, প্রত্যেকটি শেকড়ই অত্যন্ত ভেষজ গুণসম্পন্ন হয়ে থাকে। কারি পাতা গাছের শেকড় অর্শ রোগের জন্য অনেক বেশি কাজে লাগে।

বাংলাদেশের কোথায় কারি পাতা পাওয়া যায় তা জেনে আপনার শরীরে ডায়রিয়া রোগের উপশম করতেও কারি পাতা অনেক ভালো কাজ করতে পারে। এছাড়াও আপনি যদি কারিপাতার সবুজ পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন তাহলে খুব সহজেই এইরোগ সেরে যেতে পারে। এছাড়াও এই পাতাকে সেঁকে যদি আপনি খাওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে আপনার বমি ভাবও দূর হয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ পেয়ারা পাতার ২৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা

এছাড়াও আপনার শরীরে বিভিন্ন সময় যদি কোনো কারণে পোকামাকড় কামড় দিয়ে ফেলে তাহলে বাংলাদেশের কোথায় কারি পাতা পাওয়া যায় তা জেনে কাঁচা কারি পাতাকে যদি সেই স্থানে লাগিয়ে দেন, তাহলে অনেক তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়। এছাড়াও আপনি কারি পাতার বীজ থেকে এক ধরনের তেল পেতে পারেন।

কারি পাতার বৈশিষ্ট্য যার গন্ধ অনেকটা নারিকেল তেলের মত হয়ে থাকে কিন্তু এর স্বাদ অনেকটা মরিচের মতো ঝাঁঝালো হয়ে থাকে। তাই ভেষজ চিকিৎসায় কারিপাতার ব্যাপক ব্যবহারের ফলে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

চুলের যত্নে কারি পাতা কিভাবে কাজে লাগে

রান্নার কাজেই নয় চুলের যত্নেও কারি পাতার অবদান অনেক বেশি। কারি পাতার এই বিশেষ গুণটি চুলের নানা ধরনের সমস্যা দূর করতে অনেক ভালো কাজ করে। চুলের যত্নে কারি পাতা কিভাবে কাজে লাগে এবং বাংলাদেশের কোথায় কারি পাতা পাওয়া যায় চলুন জেনে আসি।

  • প্রথমে আপনি কারি পাতাকে পানির সাথে মিক্স করে নিয়ে পেস্ট করতে হবে।
  • সেই পেস্ট এর সাথে টক দই এবং অলিভ অয়েল মিশিয়ে চুলের স্ক্যাল্পে কিছু সময়ের জন্য ম্যাসাজ করতে হবে। মিনিমাম এক ঘন্টা রেখে দিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এমনকি আপনি এটি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহারও করতে পারেন।
  • আপনি চাইলে নারিকেল তেলের সাথেও কারি পাতাকে ফুটিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। হালকা গরম করে আপনার স্ক্যাল্পে এই তেল ম্যাসাজ করতে পারেন। তারপর কিছু সময় পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারেন।
  • কারি পাতার সাথে মেথি এবং পিঁয়াজ মিক্স করে পেস্ট করে নিতে পারেন। এরপর নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে এই তেল চুলে ম্যাসাজ করতে পারেন। এক ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ দিন ব্যবহার করতে পারেন।
  • এই কারি পাতা আপনার চুলের গোড়াকে মজবুত করে চুল পড়া কমিয়ে দেয়।
  • অনেক সময় ধরে কারি পাতা ব্যবহার করার ফলে চুল অনেক বেশি কালো করে তোলে।
  • চুলের পুড়ে যাওয়া ভাবকে দূর করে দেয়। অনেকেই দেখা যায়, চুলের অকালপক্কতায় ভোগে থাকেন যাদের এই ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা এই কারি পাতাকে ব্যবহার করতে পারেন।
  • আপনার চুল যখন পাতলা হয়ে আসবে তখন এই কারি পাতাকে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন।
  • আপনি বাজারের যেকোনো জিনিসই ব্যবহার করেন না কেন প্রাকৃতিকভাবে এই কারি পাতাকে যখন ব্যবহার করবেন তখন আপনার চুলের সমস্যা অনেক ভালোভাবে দূর হয়ে যাবে।

শেষকথা

এই পোস্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের কোথায় কারি পাতা পাওয়া যায়, কারি পাতার বৈশিষ্ট্য এবং আরও বিস্তারিত কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যদি বিস্তারিত আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে পোস্টের নিচের অংশে মন্তব্য করে আমাদের পাশেই থাকুন। ২৫২৭৫


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url